‘নিরপেক্ষ থেকে জনগণের দ্বারা ভালো নির্বাচন করানো আমার ব্রত’
আমি একটি আদর্শকে লালন করতে পারি। কিন্তু জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাকে হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আমার কোনো কর্মকাণ্ড যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আমার এটাই ব্রত থাকবে, জনগণের দ্বারা একটি ভালো নির্বাচন করানো এবং সকল সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষভাবে নেওয়া।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন অভিমত জানান সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (বেশি পরিচিত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামে)।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাবেন। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট।
>> মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? জানতে চাইলে মো. সাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ সরকার, সরকার পদ্ধতি ও দেশ পরিচালিত হোক এটাই সাধারণ মানুষের কামনা থাকে। আমিও, (তেমন কিছু কামনা করি)। রাষ্ট্রপতি হলেও আমিও একজন সাধারণ ভোটার। যে দল থেকেই মনোনীত হই না কেন, নির্বাচনের সময় হোক অথবা কোনো বিশেষ সময়ে যদি প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্ন ওঠে তাহলে আমাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকতে হবে।
জনগণ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি একটি আদর্শকে লালন করতে পারি, কিন্তু জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাকে হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আমার কোনো কর্মকাণ্ড যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেই চেষ্টাই থাকবে সবসময়। আমার এটাই ব্রত থাকবে, জনগণের দ্বারা একটি ভালো নির্বাচন করানো এবং সকল সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষভাবে নেওয়া।
>> বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেলে যেতে হয়েছিল সাহাবুদ্দিনকে
তিনি বলেন, সংবিধান বলে রাষ্ট্র আমাকে যেটুকু অধিকার দিয়েছে, সেটুকু যেন আমি পরিপূর্ণ করতে পারি, আল্লাহ’র কাছে সেই প্রার্থনা করি। আল্লাহ যেন সেই শক্তিটা দেন। সেই শক্তিবলে বলীয়ান হয়ে আমি যেন আমার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারি।
এসময় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বলেন, সব মানুষ একই আদর্শের ধারক-বাহক হবে এমনটা নয়। সবাই একই আদর্শের হলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিল। সে শক্তি একেবারে শেষ হয়ে গেছে তাও নয়। বরং তাদের আরো বেশি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দিনে দিনে আরও বাড়ছে। তা যাই হোক, কোনো কোনো মানুষ তো সেই শক্তির পক্ষেও আছে। আবার কেউ কেউ শান্তির পক্ষে আছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করব কার পক্ষে? জনগণই ঠিক করবে তারা শান্তির পক্ষে নাকি নৈরাজ্যের পক্ষে। এটা চিন্তাভাবনা করার দায়িত্ব ভোটারের বা জনগণের। জনগণ যদি মনে করে তারা ভালো, এদের অতীত ভালো তাহলে তাদের ভোট দেবে। ভোটাররা যদি মনে করে এরা ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন করেছে। আবার যদি মনে করে উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু যথেষ্ট নয়। এটা ভোটারদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার বিষয়। ভোটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ সরকার, সরকার পদ্ধতি ও দেশ পরিচালিত হোক এটাই সাধারণ মানুষের কামনা থাকে।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমি যে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছি, সেটা বিধিবদ্ধ সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতির যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্বই পালন করতে হবে আমাকে। আমি সংবিধান মানতে বাধ্য। এমন সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার পরই জাতীয় নির্বাচন। সর্বপ্রথম আমাকে গুরুত্ব দিতে হবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপেক্ষ নির্বাচনের ওপর। লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা একটি ভিশন নিয়েই দেশ স্বাধীন করেছি। ভিশনটি হলো দেশ স্বাধীন হবে এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তারা দেশ পরিচালনা করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে। দুর্ভাগ্যবশত অতীতে সেটার ব্যত্যয় ঘটেছে।
তিনি বলেন, নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যে ব্যত্যয় হয়েছে সেটা স্বাভাবিক ব্যত্যয় নয়, অস্বাভাবিক ব্যত্যয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। যিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করলেন, তাকেই পরিবারসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল। তারপরই রাষ্ট্রের অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। সংবিধানের পরিবর্তন হতে থাকে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক চেতনার সংবিধান বানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যাতে না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স করে হত্যাকারীদের রক্ষা করা হয়।
অর্ডিন্যান্স হয়েছিল মোশতাক সরকারের সময়। আর এটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে কনফার্ম করেন জেনারেল জিয়া। এমন পরিস্থিতির পর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে যাই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে দেশটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসে। ওই সময় বেশকিছু সামরিক ফরমান জারি করা হয়। কখনো জিয়ার সরকার, কখনো এরশাদ সরকারের আমলে। নানান ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করা হয়। তারপর বিচার শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার চেয়েছিলেন। এটা তার অঙ্গীকার ছিল, তিনি বিচার করতে পেরেছেন। যদিও রায়টি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি। নানা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তারা আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারপরও যতটুকু সম্ভব হয়েছে, রায় কার্যকর হয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ২১-২২ বছরে সংবিধান ক্ষতি-বিক্ষত হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে এসে আস্তে আস্তে ক্ষত সারানোর চেষ্টা করল। ৯৬ এর পর ২০০১ সালে নানা ষড়যন্তের মাধ্যমে নির্বাচন হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলো, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসল। তারা ৫ বছর দেশ চালাল। নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আমি এখন মন্তব্য করব না। এরপর ২০০৮ সালে নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা কোনো রকম হুমকিকে প্রশ্রয় দেননি কিংবা মাথা নত করেননি। তিনি গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। নির্বাচন হলো, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করল। ২০১৮ সালে আবারও একই ধরনের নৈরাজ্য করার চেষ্টা করা হলো। নির্বাচন হলো, আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসল। গত ১৪ বছরের শাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনেক প্রত্যাশা পূরণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
ব্যক্তিগতভাবে একটি আদর্শের বিশ্বাসী হলেও বাস্তবতায়ও বিশ্বাস করতে হবে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে আমি মনে করি এদেশের সাধারণ মানুষ চায় একটি উন্নয়নের ধারা বহাল থাকুক। যে ধারায় ১৪ বছরের সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে ও বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার সাথে সাথে সবকিছু এখন মানুষ দোরগোড়ায় পাচ্ছে। শহরের সুবিধা এখন গ্রামে। মানুষ এখন সচ্ছল। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি আদর্শে বিশ্বাসী, কিন্তু বাস্তবতায়ও বিশ্বাস করতে হবে। বাস্তবতাকে তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেই আলোকে আমি বলছি বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকলে গণতন্ত্রও রক্ষা হয় এবং দেশের মানুষেরও উপকার হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গেলে আমি চাইব এই নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়। সাধারণ মানুষের যেন অংশগ্রহণ থাকে। ভোটারের উপস্থিতি থাকে। ভোটাররা যাকে ভোট দিতে চায়, তাকে যেন ভোট দিতে পারে। এটা যেন নিশ্চিত করা যায়। নির্বাচন কমিশনের এটা মহান দায়িত্ব। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বলা থাকলেও নির্বাচন কমিশন আইন ছিল না। গত বছর যা প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তারা অপরিসীম স্বাধীনতা ভোগ করবে। নির্বাচনের সময় অনেক এক্সিকিউটিভ পাওয়ার নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকে।
কোনো কোনো সময় রাষ্ট্রপতিকেও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। আমি মনে করি নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট। এরপরও রাষ্ট্রপতি হিসেবে যদি আমার ভূমিকা রাখার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জোর দিয়ে সকলকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। যেখানে থাকবে না কোনো উচ্ছৃংখলতা, থাকবে না জালিয়াতি বা হুমকি। অর্থাৎ মানুষকে স্বাভাবিক অবস্থায় ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর আগে বিচারকের দায়িত্ব ছাড়াও দুদকসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া একসময় সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পরিচিতি
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্ক পাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ডাকা নাম চুপ্পু যুক্ত করে ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামে তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী এবং মাতার নাম খায়রুন্নেসা।
শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। তার রাজনীতির হাতেখড়ি সেখান থেকেই।
১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও কারাবরণ
১৯৬৬ সালে কলেজ জীবনে প্রবেশের আগে পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হন। পরে টানা ৬ বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭১ সালে পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান সাহাবুদ্দিন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
আইন পেশা ও দুদক কমিশনার
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।
বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারিক জীবনের ইতি টানার পর আবারও আইন পেশায় ফেরেন তিনি।
২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন তিনি। এরমধ্যেই তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয় সরকার। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম-সচিব ছিলেন।
আরএম/জেএস