দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে অস্বস্তি, আতঙ্ক নতুন সংগঠনে
বাংলাদেশে জঙ্গি ছিনতাইয়ের প্রথম ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০১৪ সালে। এরপর বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হলেও সফল হয়নি জঙ্গিরা। ত্রিশালের ঘটনার নয় বছর পর দিনে-দুপুরে 'ফিল্মি স্টাইলে' জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে খোদ রাজধানীতে।
গত ২০ নভেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।
ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সিএমএম আদালতের গেটের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় সহযোগীরা।
আরও পড়ুন>> ‘ধরা পড়েও’ না পড়া মেজর জিয়াই এখন বড় হুমকি
ওই ঘটনার পর দুই দফায় পালাতে ব্যর্থ হওয়া কয়েকজন জঙ্গিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মেলেনি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির সন্ধান।
আতঙ্কের বিষয়, পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
আরও পড়ুন>> ‘রেকি’ করে চাবি ও অ্যান্টিকাটার নিয়ে এসেছিল জঙ্গিরা
দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের কেন ডান্ডাবেড়ি ছাড়া আদালতে নেওয়া হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত পলাতক দুই জঙ্গি উৎকণ্ঠার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সেগুলো মানলে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো না। সামনের দিনগুলোতে যেকোনো আসামির ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
পালানো দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত ঝুঁকি রয়েই যায় উল্লেখ করে সাবেক আইজিপি বলেন, দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে নাশকতার আতঙ্ক থেকেই যায়। সফল জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমের মধ্যে এই ঘটনা অনেক বড় দুর্বলতা দেখিয়েছে। প্রকাশক দীপন ও ব্লগার অভিজিতকে হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফাঁসির দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্বস্তি রয়ে যাবে।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছেন র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকলে এ ঘটনায় আমাদের প্রস্তুতি থাকতো। পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হতো, তাহলে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা রোধ করতে পারতাম।
ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা কোথায়? এমন প্রশ্নে কমান্ডার মঈন বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে পুনরায় গ্রেপ্তারে র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। যারা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়েছে তাদের আগের অপরাধ কার্যক্রম, তাদের বিচরণ ও সিসিটিভি বিশ্লেষণসহ সার্বিক দিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি কোথায়, দেশে নাকি দেশের বাইরে তা এই মুহূর্তে বলার অবকাশ রাখে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দু’জন জঙ্গির বিষয়ে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার যারা ওখানে দায়িত্বে ছিল, গাফিলতির জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির না হয় সেজন্য পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার কি করণীয় তার একটি সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> জঙ্গিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর জন্য কারা অধিদপ্তরকে চিঠি
আদালতে জঙ্গি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে কমিশনার বলেন, নজরদারিতে শুধু সেই দুজনই না, জঙ্গি ছিনতাইয়ে যারা জড়িত ছিলেন তাদের অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। আশা করছি অতি দ্রুতই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
যোগাযোগ করা হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি ছিনতাইয়ের অতীত রেকর্ড আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কি প্রস্তুতি ছিল? আমরা আসলে পারিনি। যে দুই জঙ্গি পালিয়েছে তারা কোথায়? আমরা তো রেড অ্যালার্টও জারি করেছিলাম। তাদের ধরতে না পারা পর্যন্ত বিষয়টি এলার্মিং।
অন্যদিকে বাংলাদেশে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। ঘর ছেড়ে উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল চার তরুণকে উদ্ধার করে ডি-র্যাডিক্যালাইজডের পর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ এক তরুণ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কুমিল্লাসহ অন্যান্য অঞ্চল হতে নিখোঁজ চারজন তরুণ ও উগ্রবাদী সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় দেওয়া ও অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে উগ্রবাদী সংগঠনটির দাওয়াতি এবং অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও নিরুদ্দেশ তিন তরুণসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ তরুণদেরকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রেরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে গ্রেপ্তার জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন>> ছেলের জঙ্গি কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির : পুলিশ
পরে গত ২১ অক্টোবর রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিকসহ সাতজন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এছাড়া গত ৩ নভেম্বর রাতে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় থেকে সংগঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির আহম্মেদ বাচ্চু, হিজরতকৃত সদস্যদের সার্বিক সমন্বয় সুজন, ইসমাইল হোসেন হানজালা এবং সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি হেলাল আহমেদ জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৯ নভেম্বর সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ২ সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা হতে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), ফরহাদ হোসেন (২২), মুরাদ হোসেন (২১) ও ওয়াসিকুর রহমান নাঈম (২৮) নামে পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি, হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল।
অন্যদিকে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকা থেকে উগ্রবাদী নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. আব্দুল্লাহ (২২), মো. তাজুল ইসলাম (৩৩), মো. জিয়াউদ্দিন (৩৭), মো. হাবিবুবুল্লাহ (১৯) ও মো. মাহামুদুল হাসান (১৮)।
সিটিটিসি জানায়, কুমিল্লা থেকে সাতজন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে ডিএমপির সিটিটিসি ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আবরারুল হককে শনাক্ত করে রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। আবরারুল হকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশব্যাপী নিখোঁজের চাঞ্চল্যকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংগঠনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরে রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী জানান, তিনি সংগঠনের জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগের প্রধান।
জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এর আগে গত ৯ নভেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের ছেলে ডা. সাদিক সাইফুল্লাহ ওরফে ডা. রাফাতকে তার এক সহযোগীসহ সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডা. রাফাত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। ডা. রাফাত ইতোপূর্বে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন। তার চেষ্টায় বহু লোক এ সংগঠনে যোগ দেয়। পরে ডা. রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াতে দলবলসহ যোগদান করেন। ডা. রাফাতের নেতৃত্বেই প্রথম ১১ জন বান্দরবানের কুকি চিন ক্যাম্পে হিজরত করে। ডা. রাফাতের সামগ্রিক কার্যক্রমে জামাতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল বলে দাবি সিটিটিসির।
আরও পড়ুন>> পার্বত্য অঞ্চলে অর্ধশতাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে : র্যাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবধানতা ও সতর্কবার্তার মধ্যেই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ইতিহাসের জঘন্যতম জঙ্গি হামলা ঘটে যায়। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে জঙ্গি-উগ্রবাদী তৎপরতা বেড়েছে। জঙ্গি বিরোধী তৎপরতায় আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। যারা জামিনে বেড়িয়েছে তাদের ওপর নজরদারি রাখা, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বিপথগামীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও তরান্বিত করতে হবে বলে মনে করেন তারা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তথাকথিত হিজরতের ডাকে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক তরুণের খোঁজ এখনো মেলেনি। এ অবস্থায় যেকোনো সময় নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়া থেকে ১৯ জেলার নিরুদ্দেশ ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ তরুণের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের খুঁজে বের না করা পর্যন্ত এই নিখোঁজ তরুণরা হুমকিস্বরূপ। কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা যেকোনো ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। বিষয়টি নিয়ে র্যাব ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
নিরাপত্তার জন্য নতুন জঙ্গি সংগঠন কতটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে? জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনে হচ্ছে না তাদের সে ধরনের সক্ষমতা এই মুহূর্তে আছে। তবে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে তৎপর থাকা। যেহেতু এটি বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন থেকে বেড়িয়ে আসা জঙ্গিদের প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, তাই তাদের নাশকতা, হামলার চেষ্টা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সতর্ক থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন সংগঠনে জড়িয়ে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুনরা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তারা যাতে গ্রেপ্তার না হয়, আবার গ্রেপ্তার হলেও কিভাবে ছিনিয়ে নেওয়া যায়, জঙ্গিদের এমন পরিকল্পনার চিত্র আমরা দেখলাম। বোঝাই যাচ্ছে তারা সবকিছু জেনেশুনে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখবে। তারা বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি করতে পারে। তবে কখন কোথায় তারা নিরাপত্তা ঝুঁকি কিংবা ক্ষতির কারণ হতে পারে হবে সেটা বলা যায় না। সেজন্য কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বিশেষ নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
যোগাযোগ করা হলে কাউন্টর টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ে আমরা নিরাপত্তার শঙ্কা দেখছি না। সিটিটিসিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কথিত হিজরতের নামে যারা ঘর ছেড়েছে তাদের বেশ কয়েকজনকে আমরা শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
জেইউ/কেএ