কমবে ভোগান্তি বাঁচবে সময়, অপেক্ষায় চাকরিজীবী-শিক্ষার্থীরা
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে বহু বছর ধরে অস্বস্তিতে আছেন নগরবাসী। একে তো লক্কর-ঝক্কর বাস তার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা। চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী- যারা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যাতায়াত করেন তাদের ভোগান্তিটা চরম বিরক্তির পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার রাস্তায় নিত্য যাতায়াতকারীদের একটি অংশ অন্তত স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজধানীর ফার্মগেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোহাম্মদ নূরউদ্দিন। দুই বছর ধরে তিনি পূর্ব রাজাবাজারে থাকছেন। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় তার নিজের বাড়ি আছে। সেখানে পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন। প্রতিদিন বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার ঝক্কি এড়াতে পরিবার ছেড়ে দূরে থাকেন নূরউদ্দিন।
ঢাকা পোস্টকে নূরউদ্দিন বলেন, একসময় টঙ্গী থেকে প্রতিদিন বাসে ফার্মগেট আসা-যাওয়া করতাম। ২১ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি রাস্তা। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যেত। উপায় না পেয়ে পরিবার ছেড়ে অফিসের কাছাকাছি চলে এসেছি। এখন মেট্রোরেল চালু হলে আবার টঙ্গী থেকে অফিস করব।
আরও পড়ুন >> মেট্রোরেল : মিরপুর-উত্তরার ফ্ল্যাট আগ্রহী ক্রেতারা
উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে একটি বায়িং হাউজে কাজ করেন আনোয়ার হোসেন শিপন। প্রতিদিন কলাবাগান থেকে উত্তরায় যাতায়াত করেন তিনি। তিনি বলেন, রাস্তায় যানজট এড়াতে খুব সকালে অফিসের উদ্দেশে বের হই। তবুও প্রায়ই এয়ারপোর্ট রোডে যানজটে পড়তে হয়। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। যেন একটা যুদ্ধের মতো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে হয়। মেট্রোরেল চালু হলে স্বস্তি আসবে বলে আশা করছি। তখন আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরায় অফিস করব।
পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। আর এই রুট তথা উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
উত্তরার শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাহমিনা আমিন। সপ্তাহে চারদিন ক্লাসে যেতে হয় তাকে। আগারগাঁওয়ের এ বাসিন্দা মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, মেট্রোরেল চালুর খবরে তিনি দারুণ খুশি। সময় বাঁচাতে তিনি মেট্রোরেলে আসা-যাওয়া করবেন। তবে ভাড়াটা আরও কমানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালুর দাবি জানান তিনি।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর (বুধবার) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে মেট্রোরেল। ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট।
আরও পড়ুন >> প্রস্তুত মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, লাগবে ৮০ মেগাওয়াট
তবে উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলবে না মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পর প্রথম সপ্তাহে শুধু সকালে ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে চলবে। ধীরে ধীরে ট্রেন চলার সময় বাড়বে। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথের ট্রেন ১৬-১৭ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছাবে।
পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। আর এই রুট তথা উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন >> আধুনিক প্রবেশ ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারবেন শুধু টিকিটধারী
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
মেট্রোরেল চালু নিয়ে ঢাকাবাসীর মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। তবে ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমালোচনা আছে। হারুন-অর রশিদ নামে একজন জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে তিনি বাসের বদলে ট্রেনেই যাতায়াত করবেন। তবে ভাড়া বেশি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন হারুন। ঢাকাবাসীর কথা চিন্তা করে আরেকবার মেট্রোরেলের ভাড়া পুনর্বিবেচনা করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পথে মেট্রোরেলে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর–১১, মিরপুর–১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওসহ মোট ৯টি স্টেশন রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।
এনআই/জেডএস