প্রতিরোধে মনোযোগ নেই, শুধু ওষুধ আর ওষুধ
লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করতে গিয়ে আমি দেখলাম, রোগীদের ভেতরে সুস্বাস্থ্য আর প্রিভেন্টিভ কেয়ার সম্পর্কিত ধারণাটা খুবই কম। এমনকি আমাদের চিকিৎসকরাও হয়তো সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এ বিষয়ে সময় কম দিয়ে শুধু ওষুধের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। আমার মনে হয়েছে এখানে চিকিৎসক আর রোগীর মধ্যে একটা গ্যাপ (দূরত্ব) তৈরি হয়েছে। তাই আমার মনে হলো লাইফস্টাইল মডিফিকেশন, প্রিভেন্টিভ কেয়ার ও নন-ফার্মাকোলজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ আছে...
ডা. জাহাঙ্গীর কবির, একজন লাইফস্টাইল মডিফায়ার। যিনি ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইফস্টাইল, ডায়েট, কিটো-ডায়েট সম্পর্কিত পরামর্শের মাধ্যমে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, অন্যদিকে প্রচলিত ধারার বাইরে একটু আলাদা চিকিৎসা-পরামর্শ দিয়ে নিজ পেশায় সমালোচনার পাত্র হয়েছেন।
তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি যেসব ভিডিও দিচ্ছেন সেগুলোতে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, জীবনধারা পরিবর্তন, সেক্স হরমোন বাড়ানোর উপায়সহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ রয়েছে। এমনকি এসব ভিডিও দেখে অথবা সরাসরি তার পরামর্শ নিয়ে অসংখ্য মানুষ চমকপ্রদভাবে ওজন কমিয়ে সুস্থতার সঙ্গে জীবনযাপন করছেন।
ব্যতিক্রমী এ চিকিৎসকের প্রতি সাধারণ মানুষের এত ভালোবাসা ও বিশ্বাস এবং তাকে অনুসরণের পরও কেন চিকিৎসকদের মধ্যে তিনি সমালোচনার পাত্র, কী আছে তার ডায়েট পরামর্শে, ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার কারণ কী— এসব প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসক হিসেবেই পথচলা শুরু। হঠাৎ ডায়েট প্ল্যান দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : দেখুন, আমরা নিয়মিত যা খাচ্ছি, এসব খাবারের কারণেই হচ্ছে ৮৫ ভাগ রোগ। এজন্য আমি মনে করি, একজন চিকিৎসককে সবার আগে একটা সুস্থ খাবার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা উচিত। এটাই আমার বুঝতে সময় লেগেছে। আমরা সবাই ডায়েট প্লান দিই। একজন রোগী যদি বারডেম হাসপাতালে যান, তারাও একটা ডায়েট চার্ট দেয়। রোগীকে ডায়েট প্লান দেওয়াটা একজন চিকিৎসকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যেমন- একজন হাইপারটেনশনের রোগী, সে কী খেতে পারবে বা পারবে না, এটা অবশ্যই তাকে জানতে হবে। নয়তো কিছু খাবার তাকে সুস্থতার বিপরীতে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেবে।
একটা মানুষকে যদি আমি মার্সিডিজ গাড়ি হিসেবে তুলনা করি, সেটা তো কেরোসিন তেল বা পোড়া মবিলে চলবে না। তাকে অবশ্যই অকটেন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমার যে মূল্যবান শরীর, তাকেও ন্যাচারাল ফুড (প্রাকৃতিক খাবার) দিতে হবে। যেগুলো আল্লাহ আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, সেগুলোই খেতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ন্যাচারাল খাবারের বিষয়ে বলি। সবমিলিয়ে আমার কথাগুলো হয়তো মানুষের কাছে ভালো লাগে, নিশ্চয়ই তারা আমার পরামর্শগুলো থেকে উপকার পান। তাই হয়তো তারা আমাকে ভালোবাসেন। এর বাইরে আমার বিশেষ কোনো চমক নেই।
ঢাকা পোস্ট : আপনার দৃষ্টিতে সুস্থতা কী? কীভাবে একজন মানুষ সুস্থ থাকতে পারেন?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : সুস্থতা বলতে আমি বুঝি, একটা মানুষ ওষুধবিহীন ভালো আছেন, ভালো ঘুম হচ্ছে, প্রচুর কর্মশক্তি (এনার্জি) আছে… যতটুকু থাকা উচিত, খাবার হজম হচ্ছে এবং যিনি উদ্যমী।
আরও পড়ুন >> ভোক্তা অধিকারের জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন জাহাঙ্গীর কবিরের
সাধারণত আমরা একটা বয়সের পর উদ্যোমটা হারিয়ে ফেলি। ঘুম হারিয়ে ফেলি, হজম-শক্তি কমে যায়, চেহারার মধ্যে একটা অসুস্থতার ছাপ চলে আসে। সবমিলিয়ে আমরা তারুণ্যটা হারিয়ে ফেলি। এই মানুষদের জন্য কিছু করাটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। কেউ যদি আমার নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করেন, মেডিসিন ছাড়াই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। যেমনটা আমরা কৈশোরে পেয়েছি।
ঢাকা পোস্ট : অন্য চিকিৎসকরা যেখানে রোগী দেখা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন মাসোহারায় বুঁদ, তখন আপনি কেন ব্যতিক্রমী এ চিকিৎসাসেবা নিয়ে এগোচ্ছেন?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : মেডিকেলে কিছু টার্মিনোলজি (পরিভাষা) আছে। যেমন- প্রিভেন্টিভ কেয়ার (রোগ প্রতিরোধমূলক সেবা)। যখন আমি এ বিষয়ে পড়ি, সেখানে লেখা আছে হাইপারটেনশন, এর আগে আছে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন। লেখা আছে ডায়াবেটিস, এর আগেও আছে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন। তাহলে নন-ফার্মাকোলজিক্যাল ম্যানেজমেন্টের ভেতরে এটা আছে। ফার্মাকোলজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে যারা নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারছেন না, তাদের জন্য সাময়িক একটা সমাধান। যেমন- আমরা বলি, ঠিক আছে আপনি আপনার প্রেশার (রক্তচাপ) নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, এ ওষুধ খান। এখন যদি আমরা দেখি, রোগীর প্রেশার কেন বেড়েছে, তাহলে দেখব এর পেছনে দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। অর্থাৎ, আপনি খুব স্ট্রেসের (চাপ) মধ্যে আছেন, আপনার খাওয়া-দাওয়া ঠিক নেই, ঘুম ঠিক নেই, আপনার রক্তনালীর ভেতরে চর্বি জমেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের কথা বলি।
একজন ব্যক্তির জন্য যেমন ভালো ঘুম আর মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজন আছে, তেমনি খাবার-দাবারের সঙ্গেও সুস্বাস্থ্যের সম্পর্ক আছে। আমি যদি গরুর মাংস সয়াবিন তেল দিয়ে রান্না করে সাদা ভাত দিয়ে বেশি করে খাই, তাহলে নিশ্চয়ই প্রেশার আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এছাড়া আরও কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রেশারের সম্পর্ক আছে। তার মানে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ব্লাডের ভলিউম কমাতে হবে, রক্তনালীগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। এখানে মানসিক প্রশান্তিও জরুরি।
লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করতে গিয়ে আমি দেখলাম, রোগীদের ভেতরে সুস্বাস্থ্য আর প্রিভেন্টিভ কেয়ার সম্পর্কিত ধারণাটা খুবই কম। এমনকি আমাদের চিকিৎসকরাও হয়তো সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এ বিষয়ে সময় কম দিয়ে শুধু ওষুধের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। আমার মনে হয়েছে এখানে চিকিৎসক আর রোগীর মধ্যে একটা ল্যাকিংস (উদাসীন) তৈরি হয়েছে। তাই আমার মনে হলো লাইফস্টাইল মডিফিকেশন, প্রিভেন্টিভ কেয়ার ও নন-ফার্মাকোলজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। সেই লক্ষ্যে মূলত আমি মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করছি। আমি যে কাজটা করছি সেটা হলো সচেতনতা তৈরি করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষার মাধ্যমে সুস্থ থাকার পথ ধরিয়ে দেওয়া। হয়তো এ কারণে মানুষের কাছে আমি পৌঁছাতে পেরেছি। মানুষ আমাকে ভালোভাবে কাছে টেনে নিয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : ডায়েট আর কিটো-ডায়েটের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কিন্তু অনেকের মধ্যে বিষয় দুটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। যদি একটু পরিষ্কার করতেন…
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : দেখুন, স্পেসিফিক (নির্দিষ্ট) বলা যায় না যে এই লোক এই ধরনের ডায়েট করবেন। বাংলাদেশে আগে দুই শ্রেণির লোক ছিলেন। এর মধ্যে জমিদার শ্রেণির লোকেরা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতেন। যে কারণে তাদের চেহারা সবসময় চাকচিক্যময় থাকত, তারা লম্বা-চওড়া হতেন, তাদের বডি শেফ অত্যন্ত ভালো ছিল। যারা কৃষক শ্রেণির লোক ছিলেন, তারা সবসময় ভাতজাতীয় খুব কম দামি খাবার খেতেন। যে কারণে তাদের উচ্চতা, বডি ও চেহারা একটু দুর্বল প্রকৃতির থাকত। পার্থক্যটা আমাদের দেশে অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল। এক শ্রেণির লোক অনেক পরিশ্রম করতেন কিন্তু সস্তা খাবার খেতেন। ফলে জাতিগতভাবে আমরা খাটো প্রকৃতির দিকে চলে গেছি।
আরও পড়ুন >> চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবিরের প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা
ইউরোপসহ বড় বড় দেশগুলোর দিকে তাকান। দেখবেন, তারা খুব বড় প্রকৃতির। তাদের শরীর বলিষ্ঠ, অনেক লম্বা-চওড়া। আফ্রিকানরা দেখবেন অনেক লম্বা-চওড়া। কারণ, তারা সবসময় ন্যাচারাল খাবার খায়। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খায়।
কিছু দেশ দেখবেন মরুভূমির ভেতরে, যেখানে শাক-সবজি তৈরি হয় না। আবার যারা বরফের ভেতরে থাকেন, তাদের শুধু মাছ-মাংস খেতে হয়। কারণ, সেখানে শাক-সবজি হয় না। সুতরাং যেটা বলছিলাম, একটা ফিক্সড ডায়েট কারও জন্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করছি, কেউ যদি আমাদের কাছে আসেন শুরুতে, তাকে আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই। দেখি তার শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধশক্তি) আছে কি না, শরীরে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে কি না, শরীরে কোন ধরনের প্রদাহ আছে কি না প্রভৃতি। এগুলো নিয়ে আমরা একটি বেইজ লাইন রিপোর্ট তৈরি করি। রিপোর্টের ফল দেখে পরবর্তীতে আমরা দেখি, আপনি কী কী খেতে পারবেন।
এছাড়া, আপনি রাতে ঠিক মতো ঘুমাচ্ছেন না। মচমচে ও সুগারযুক্ত খাবার খেতে ইচ্ছা করছে। আবার যদি ভালো ঘুম হয়, তাহলে দেখবেন ভালো একটা খাবারের প্রতি আপনি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তার মানে স্ট্রেসের (ধকল) সঙ্গে আপনার খাবারের সম্পর্ক আছে। এর বাইরে আপনার ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির (শারীরিক কাজকর্ম) সঙ্গে খাবারের একটা সম্পর্ক আছে। যদি একটা লোক সারাদিন চেয়ারে বসে থাকেন, তার খাবার আর যিনি গ্রামে ১২/১৪ ঘণ্টা কৃষিকাজ করেন তার খাবার এক হতে পারে না!
আবার যার মেন্টাল স্ট্রেস বেশি বা ফিজিক্যাল স্ট্রেস বেশি, দুজনের খাবার তো এক হতে পারে না। সুতরাং সব ডায়েট সবার জন্য সমান নয়। আমাদের ডায়েট ম্যানেজমেন্টে সবার জন্য ফিক্সড কোনো ডায়েট নেই। আমরা বলি যার প্রয়োজন যতটুকু, ঠিক ততটুকু খাবেন। তবে, এক্ষেত্রে ভালো খাবারটা তাকে বেছে নিতে হবে। যেন খাবারটা প্রাকৃতিক হয়। সেটা যেন আর্টিফিশিয়াল, প্রসেস, মডিফাইড, আলট্রা প্রসেস, বেশি সুগারযুক্ত বা ট্রান্সফেটযুক্ত (স্থানান্তরযুক্ত) না হয়। এ ধরনের খাবার আমাদের সবার এভোয়েড (এড়িয়ে যাত্তয়া) করতে হবে। কারণ, এগুলো প্রদাহ তৈরি করে। এজন্য আমার কাছে আসা সবাইকে আমি প্রথমে বলি, আগে বাজে খাবারগুলো সবাইকে বর্জন করতে হবে। বিশেষ করে ডুবো তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার বা ফাস্ট ফুড ভালো নয়। এগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেন যেন আমরা খাবারগুলো খাচ্ছি। কেউ যদি এগুলো না খান, তাহলে অনেক রোগবালাই থেকে তিনি বেঁচে যাবেন।
সবশেষে বলব, ডায়েট প্ল্যান নিয়ে আমার ভিডিওতে বিস্তারিত আছে। এগুলো দেখলে মোটামুটি একটা ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসকরাই আপনার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : আপনারা আমাকে একটা নামেই চিনেছেন, সেটা হলো লাইফস্টাইল মডিফায়ার ডা. জাহাঙ্গীর কবির। সবসময় আমি এ পরিচয় দিই। মানুষকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে আমি বলি বাজে খাবার খাবেন না, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তারপর বলি, আপনার মেটাবলিজম সেনারিও অনুযায়ী খাবেন। যেমন- আপনার মেটাবলিজম ভালো আছে। আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স নাই, আপনার সিআরপি ভালো। এক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেশন (প্রদাহ) একটা ফ্যাক্টর। শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বেশি থাকলে সিআরপি দেখে আমরা বুঝতে পারি। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ইনফ্ল্যামেশন যদি শরীরে একসঙ্গে থাকে তাহলে আরও বেশি ভয়ঙ্কর। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, আর্টারিতে (ধমনী) ব্লক তৈরি হয়।
আরও পড়ুন >> নতুনদের জন্য ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ডায়েট চার্ট
ধরুন, আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। এক্ষেত্রেও আমাদের পরামর্শ সিম্পল। যেমন- আপনি ন্যাচারাল খাবার খান, যতটুকু খাচ্ছেন আপনি বার্ন করুন, শারীরিক ব্যায়াম করুন, ভালো ঘুম দেন, মানসিক প্রশান্তির চর্চা করুন, শ্বাসের ব্যায়াম করুন, মাঝেমধ্যে রোজা বা ফাস্টিং করুন। যাদের মেটাবলিক প্রবলেম (বিপাকীয় সমস্যা) আছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলছি, যেহেতু কার্বোহাইড্রেট আপনার শরীরে বেশি হয়ে গেছে, সেটা কমানোর জন্য আপনাকে খাবার-দাবারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
যেমন- ডায়াবেটিস রোগীর দেহে চিনি বেশি, আমি তাকে বাইরের চিনি খেতে দেব কেন? এজন্য আমরা শর্করার পরিমাণ ১০ শতাংশে নিয়ে আসি। এদিকে, প্রোটিনও ইনসুলিনকে ৫০ শতাংশ ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করে। এক্ষেত্রে তাদের প্রোটিনের পরিমাণ ইনিশিয়ালি ২০ শতাংশ কমিয়ে দিই। আমরা তাদের বলি, এ মেটাবলিজম শুরুর জন্য প্রথমে আপনাকে ফ্যাট খেতে হবে ৭০ শতাংশ। কিটোজেনিক ডায়েট হলো এ ধরনের ডায়েট। তবে মজার ব্যাপার হলো, আমাদের এ পরামর্শগুলো মানতে হবে শুরুর দিকে। পরবর্তীতে যখন তার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যাবে, কারও ক্ষেত্রে এক-দুই সপ্তাহ, কারও ক্ষেত্রে এক বা দুই মাস— এমন সময় লাগে। এরপর তিনি আবার নরমাল ব্যালেন্স ডায়েটে চলে আসবেন।
আপনি শারীরিক ব্যায়াম করছেন, মাসল বিল্ড (পেশি গঠন) করতে চাচ্ছেন; এক্ষেত্রে সিমেন্টের মতো কাজ করে প্রোটিন। যে কারণে ওই সময় প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া লাগে। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, লাল চালের ভাত (পরিমাণে কম), সঙ্গে সবজি। তার মানে হলো, পরিবেশ-পরিস্থিতি আর শারীরিক ভিন্নতা অনুযায়ী আপনার খাবারেও ভিন্নতা আনতে হচ্ছে। আমাদের মূল নীতি হলো অসুস্থ খাবার বাদ দেওয়া। মেটাবলিজম সেনারিও অনুযায়ী প্রথমে আপনার খাবারটা ঠিক করা হবে। পরে মেটাবলিজম যখন ভালো হবে আপনার খাবারটা আবারও পরিবর্তন করা হবে।
যেমন- একটা লোকের দেহে অনেক চর্বি আছে। সে যখন বাইরের ৭০ শতাংশ চর্বি খাবে, এক-দুই সপ্তাহ পর তার ফ্যাট কিন্তু অ্যাডাপ্টেড হবে। অর্থাৎ এ সময়ে সে তার ভেতরের চর্বিটা বার্ন করতে পারবে। এরপর সে আর ৭০ শতাংশ চর্বি খাবে না। এটাই অনেকে বুঝে না। একজন ব্যক্তি যখন রোজা রাখে আমরা বলি সে না খেয়ে আছে। কিন্তু আসলে সে না খেয়ে থাকছে না, ভেতরে জমানো ফ্যাটটা সে খাচ্ছে। এখন যদি সে বাইরে থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট খায়, তাহলে তার ফ্যাট বার্ন বন্ধ হয়ে যাবে। বডি তখন নতুন ক্যালোরি বার্ন করবে, যা আপনি নতুন খেয়েছেন। আপনি যদি কাউকে তাজা একটা খাবার দেন, সে তো আর ভেতরের পুরোনো খাবারটা খাবে না।
আরও পড়ুন >> টিকা সংক্রান্ত ভিডিও সরিয়ে ক্ষমা চাইলেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির
কিছু মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। আমি মানুষকে ৭০ শতাংশ ফ্যাট খেতে বলছি। আসলে বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। হয়তো সে এক বা দুই সপ্তাহ খাচ্ছে। কিন্তু যখন তার ফ্যাট বার্নিং শুরু হয়, সে বুঝবে তার ক্ষুধা কমে গেছে। না খেয়ে থাকতে ভালো লাগছে, শরীর এমনিতেই অনেক এনার্জি পাচ্ছে। তখন সে রোজা রাখবে। তাকে ব্যায়াম করতে হবে। এতে তার ফ্যাট বার্নিংটা আরও দ্রুততর হবে এবং মেটাবলিজমটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। এরপর ওই ব্যক্তিকে ঘুমের দিকে নজর দিতে হবে।
আমেরিকান কার্ডিয়াক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, একজন ব্যক্তিকে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। এর কম যদি ঘুমান, তাহলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি তৈরি হয়। তারা বলছে, আমেরিকাতে প্রতি ৩৪ সেকেন্ডে একজনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এর বড় কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন ঘুমকে। এজন্য আমরা বলছি, দ্রুত ঘুমাতে যেতে হবে এবং অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
এরপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি মানসিক প্রশান্তির ওপর। আমরা বলছি শ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে, মানসিক প্রশান্তির চর্চা করতে হবে। অনেকের ভিটামিন-ডি’র অভাব থাকে। এজন্য বলছি নিয়মিত রোদে যেতে হবে। এভাবে একজন রোগীকে আমরা কমপ্লিট গাইডলাইন দিচ্ছি।
ফাস্টিং করাটা পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ওপর। যদি দেখেন যে ফাস্টিং করে ভালো লাগছে তাহলে করবেন। যদি মনে হয় আপনি ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছেন। এমন হলে করবেন না। আমি কিন্তু সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কিছুই খাই না। শুধু গ্রিন টিতে একটু চুমুক দিই। আমার কিন্তু ক্ষুধা লাগে না। আর ক্ষুধা লাগলেই খেয়ে নিই। আমরা সবাইকে বলি, আপনারা ক্ষুধাকে মর্যাদা দিন। ক্ষুধা থাকতে থাকতে খাওয়াটা শেষ করে ফেলুন। রুচি থাকতে থাকতে খাওয়াটা শেষ করুন।
শুরুতে আমরা বলছি, ভাত খাওয়া যাবে না, রুটি খাওয়া যাবে না। কারণ, এগুলো শর্করা জাতীয় খাবার। কিন্তু যখন মেইনটেইনিংটা হয়ে যাবে তখন কিন্তু আমরা বলছি, ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত খাবেন। দেশীয় ফল, টক দই, মধু, কলা এসব খাবেন। ডাবের পানিও আমরা খেতে বলছি। অনেকে এখানে ভুল করে বলেন, শর্করামুক্ত খাবার। কিন্তু ঠিক নয়। আমরা যে ডাবের পানিটা খাচ্ছি, এতেও শর্করা আছে। শাক-সবজিতে আছে, ডিমে আছে, বাদামেও আছে। আমরা কিন্তু শর্করা ছাড়া চলতে পারি না বা চলছিও না। এক্ষেত্রে আমাদের ‘আংশিক’ একটা ট্যাগ দেওয়া হয়। এটা কিন্তু ভুল। যারা বিরোধিতা করছেন, আমি মনে করি তারা না বুঝে করছেন। তবে, এটা নিশ্চিত আমি এখন যে কথাগুলো বলছি ১০ বছর পর হলেও চিকিৎসকরা একসময় আমার পথেই হাঁটবেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনার চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা আছে। কিন্তু মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা এখন আপনার কাছে আসছেন, আপনার পরামর্শ নিচ্ছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : আমি কখনই মানুষের মধ্যে ক্লাসিফিকেশন (শ্রেণিবিভাজন) করি না। আমার কাছে সবাই সমান। হয়তো আমার কাছে সোহেল তাজ ভাইসহ বড় মাপের অনেকে আসেন। আমি যদি বিশেষভাবে সোহেল তাজ ভাইয়ের কথা বলি, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ও গুণীজন। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে হিসেবে তার আলাদা একটা ইমেজ আছে। কিন্তু আমার কাছে এসবের চেয়ে তার ব্যক্তিত্বটা খুব পছন্দের। কারণ, উনি যেটা বিশ্বাস করেন সেটাই করেন। উনিও মনে করেন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ নাজুক। ভেজাল খাবারসহ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা যাচ্ছে। আমিও বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। ফলে আমাদের কথাগুলো মিলে যাচ্ছে। প্রথম দিন যখন তার সঙ্গে কথা হয়, আমরা আসলে বুঝতে পারিনি এক ঘণ্টার বেশি সময় কথা হয়েছে। তার মানে হলো, আমাদের আরও অনেক কিছু বলার আছে।
সোহেল তাজ ভাইয়ের মতো আরও অনেক বিখ্যাত মানুষ আমাকে অনুসরণ করছেন। অথচ আমি মনে করি, আমরা সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করছি। এক্ষেত্রে ভিআইপিদের চেয়ে সাধারণ মানুষের রিফ্লেকশনটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন শিক্ষিত-সচেতন মানুষ হয়তো সহজেই বিষয়গুলো বুঝবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাদের একেবারেই চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান নেই তারা যদি আমার কথাগুলো বুঝতে পারেন, সেটা আমাকে বেশি আনন্দ দেয়।
ঢাকা পোস্ট : বলা হচ্ছে, একজন চিকিৎসক থেকে আপনি এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী— এ বিষয়ে কী বলবেন?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : আমি শুরুতেই বলেছি, আমাদের ৮৫ভাগ রোগের কারণে হলো খাবার। আমি যখন প্রথমে বললাম আপনাদের ভিনেগার খেতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই সময় একেকজন সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ভিনেগার বিক্রি শুরু করলেন। তবুও ভিনেগার পাওয়া যাচ্ছিল না। আরেক দল নকল ভিনেগার দিয়ে মার্কেট সয়লাব করে ফেলল। সেটা খেয়ে অসুস্থ হতে শুরু করল মানুষ। বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হলো। এর দায়ভার আমার ওপর দেওয়া শুরু হলো। এ অবস্থায় আমার রোগীরা বলল, স্যার আমাদের বাঁচান। আমাদের জন্য হলেও পণ্যগুলোর ব্যবস্থা করে দেন। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি। সবচেয়ে ভালো হয় এখান থেকেই যদি আমরা পণ্যগুলো নিতে পারতাম। এরপর আমরাও এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করলাম।
শুরুর দিকে এ প্রশ্নগুলো আসবে, এটাও আমাদের মাথায় ছিল। এরপর মনে হলো, আমাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, তাহলে ব্যবসাও হালাল। নবী করিম (সা.)-ও ব্যবসার মাধ্যমে জীবন শুরু করেছিলেন। এমনকি আমরা যারা পরকালে বিশ্বাস করি, বলা আছে যে সৎ ব্যবসায়ীরা পরকালে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে থাকবেন।
আরেকটা বিষয় হলো, আমরা যদি বিশুদ্ধ পণ্য মানুষকে দিই, সেটাও একধরনের সেবা। অর্থাৎ আপনি যখন অসুস্থ খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন, সেখানে আমি একটি সুস্থ খাবার নিয়ে এসে সেবা দিচ্ছি। আর আপনি বিশ্বাসের জায়গা থেকে এটা গ্রহণ করছেন।
শুরুতে আমাদের একটা ছোট দোকান ছিল। তখন এটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। এখন যেহেতু আমাদের খাবারগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তখন কারও কারও মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। আর প্রমোটের বিষয়টা হলো, আমার একটা কফি যদি ইউএসডি অর্গানিক সার্টিফাইড হয়, আমাকে তো সেটা বলতে হবে। আমি বলার আগেই রোগীরা আমার কাছে জানতে চাচ্ছিল কফিটা আমরা কবে পাব? এখন কফিটা আমি এনেছি। যদি তাদের না বলি তাহলে তারা জানবে কী করে? বিষয়টা তো এমন নয় যে আমি আমার দোকানের বা পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছি! শুধুমাত্র আমার অডিয়েন্স যারা রয়েছেন, তাদের জন্যই করছি। এভাবে যদি আমার পেজটা বড় হয়ে যায়, এটা তো কোনো অন্যায় না। আমি তো আমার রোগীদের মেসেজ দিচ্ছি। যদি আমি টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতাম, তাহলে বলতেন আমি ব্যবসা করছি!
এই যে এত এত মানুষ আমার কাছে আসছেন, এটা কিন্তু আমার ওপর তাদের বিশ্বাস থেকে আসছেন। আমি যদি তাদের ভালো পণ্য না দিতাম, তাহলে বিশ্বাসটা ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু এখন মানুষ এটা খেয়ে উপকার পাচ্ছেন। একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে, এমনকি তারা ব্যবহার করে বারবার এসে নিচ্ছেন। যে কারণে আমাদেরও চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমরা ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে পণ্যগুলো বিক্রি করছি না।
ঢাকা পোস্ট : বাজারের সবকিছুতেই এখন ভেজাল। এক্ষেত্রে আপনার যে পণ্যগুলো, সেগুলো কি আপনার নিজস্ব তত্ত্বাবধানেই তৈরি হচ্ছে?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : ফুড আইটেম নিয়ে আমি অনেককে বিশ্বাস করে ঠকেছি। এখন আর কাউকে বিশ্বাস করি না। এখন আমি যাদের কাছ থেকে প্রোডাক্টগুলো নিচ্ছি, সবার আগে দেখি সেগুলো অর্গানিক সার্টিফাইড কি না। তাদের ফ্যাক্টরি আইএসও ও এফডিএ রেজিস্ট্রার কি না। এক্ষেত্রে পণ্যের দায়বদ্ধতা আমার ওপর আসে না। মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো তাদের।
আমার পক্ষে কোনো প্রোডাক্ট প্রোডাকশন করা যেমন সম্ভব না, চিকিৎসাবিদ্যা ছেড়ে দিয়ে ওদের পেছনে ঘোরাও সম্ভব না।
ঢাকা পোস্ট : দেশের অসংখ্য মানুষ ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। এক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তাটা শতকরা কত শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : আমি যদি আমার কাজের মূল্যায়ন করি, তাহলে বলব যে খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে আমি পৌঁছাতে পেরেছি। কারণ, লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে হয়তো ২৮ লাখের মতো মানুষ ফেসবুকে আমার ভিডিওগুলো দেখছেন। এর মধ্যে ইউটিউবে আছেন ২০ লাখের মতো। কিন্তু কথা হলো, ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে আমাকে দেখে বা অনুসরণ করে এমন সংখ্যাটা খুবই নগণ্য।
যারাই আমার পরামর্শমূলক ভিডিওগুলো দেখছেন, তারা সবাই যে আমাকে অনুসরণ করছেন তা কিন্তু নয়। কারণ, মানুষ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাস্থ্যসচেতনতার ভিডিওগুলো খুব বেশি দেখেন না। অসুস্থ না হলে চিকিৎসকের কাছেও যান না। কিন্তু আপনি যদি একটা ভালো ও রসময় নাটকের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুক-ইউটিউবে ছাড়েন, দেখবেন যে কোটি কোটি ভিউ হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের ভিডিওগুলো খুব কম ভিউ হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে আপনার মাধ্যমে যে বিপ্লব তৈরি হয়েছে, এটা কত দূর নিয়ে যেতে চান?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : আমি যে এ পর্যায়ে আসব, এমনটা কখনও কল্পনায় ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, সবসময় আমাকে আমার কাজটা করে যেতে হবে। সেটা হতে হবে সুন্দর ও সুচারুরূপে। ঠিক সেভাবে আমি আমার কাজটা করে যাচ্ছি। এখন আমার কাজটা ঠিক কত দূর যাবে— এটা নির্ভর করছে সৃষ্টিকর্তা আর সাধারণ মানুষের ওপর। মানুষ আমাকে কতটা অনুসরণ করবে, আমার পরামর্শগুলো তারা কতটুকু গ্রহণ করবে, আদৌও আমাকে কাজ করতে দেবে কি না— বিষয়গুলো আসলে আমার ওপর নির্ভর করছে না।
মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, আমি বলব এটা একমাত্র আল্লাহ-তাআলার মাধ্যমে হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে আমার কোনো যোগ্যতা নেই এমন একটা স্বাস্থ্যবিপ্লব তৈরি করার। হয়তো এক্ষেত্রে আল্লাহ আমাকে পছন্দ করেছেন এবং পথ দেখিয়েছেন। আমার মাধ্যমেই তিনি হয়তো তার বান্দাদের ভালো রাখার একটা মেসেজ দিতে চেয়েছেন। আল্লাহ তো এখন আর ফেরেশতা পাঠান না, ভালো যা কিছু তিনি মানুষের মাধ্যমেই করান। আমি মানুষের জন্য কাজ করছি, মানুষ আমার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। এ বিষয়ে সবসময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করি।
আমার কাজ হলো সবার কাছে স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সেটা মানবে কি না, এটা তার ব্যাপার। তবে, একটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি, এতেই আলহামদুলিল্লাহ।
ঢাকা পোস্ট :সাধারণ মানুষের প্রতি আপনার কোনো বার্তা আছে কি না?
ডা. জাহাঙ্গীর কবির : মানুষের কাছে আমার বার্তা একটাই। সবার আগে নিজের ভালোটা বুঝুন। নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। আল্লাহ-তাআলা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে যে যন্ত্রগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর যত্ন নেওয়া আপনার কর্তব্য। আপনার চোখ, লিভার, কিডনি নষ্ট করবেন না। রক্তনালিগুলো সচল রাখুন, হৃদযন্ত্রটা ভালো রাখুন। আপনার পেট ভালো রাখুন, বাজে খাবার দিয়ে এটা পূর্ণ করে রাখবেন না। এটা তো ময়লার ডাস্টবিন না। এটা আমাদের দেহে শক্তি উৎপাদনের একটা যন্ত্র। ভালো ও পরিমিত খাবার, রোজা রাখার মাধ্যমে এটা পরিষ্কার রাখতে হবে।
মনে রাখবেন, নিজের স্বাস্থ্যসচেতনতা আপনাকে বাঁচাতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ডিজিজ, লিভার ডিজিজ, পেটের সমস্যা, ক্যানসার— এসব রোগ থেকে আমরা চাইলেই বাঁচতে পারি। এটা সম্ভব সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের মাধ্যমে।
একনজরে জাহাঙ্গীর কবির
একজন লাইফস্টাইল মডিফায়ার। পাশাপাশি তিনি ফ্যামিলি মেডিসিন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমারি কেয়ার রেসপিরেটরি গ্রুপ, বাংলাদেশ (আইপিসিআরজি)-এর যুগ্ম সম্পাদক।
জাহাঙ্গীর কবির ১৯৯২ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০০ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ডায়াবেটিস ও ডায়েট সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শমূলক ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে পোস্ট করে থাকেন, যা ‘জে কে লাইফস্টাইল’ নামে পরিচিত। তার ডায়েট চার্ট ও লাইফস্টাইল ইতোমধ্যে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ডা. জাহাঙ্গীর কবির রাজধানীর আফতাবনগরে ‘হেলথ রেভুলেশন’ নামক চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন।
টিআই/এমএআর/