এবারও কি বয়সে ছাড় পাচ্ছে ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর। সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী শতাধিক নেতাকর্মী। এবারও বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৫ ধারার (ক)-তে বলা আছে, ‘অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী যেকোনো ছাত্র ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হবেন’। কিন্তু এ কথা কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই!
জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রথম ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেওয়ার বয়স ২৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ওই বছর মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী-ইকবালুর রহিম কমিটিতে শুধুমাত্র বয়সের গণ্ডি মানা হয়। এরপর থেকে আর একবারও সেটি মানা হয়নি। ৩০-ঊর্ধ্ব নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনেরও উদাহরণ রয়েছে।
২০১১ সালে সংগঠনটির ২৭তম সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসেন বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ওই সম্মেলনে বয়স ধরা হয় ২৯ বছর। ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন। ওই সম্মেলনেও বয়স ২৯ বছর নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২৯তম সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে ওই সময় বয়স বাড়িয়ে করা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তীতে সেটি আরও এক বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হয়
গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় ভাগের ১১ ধারার (খ) অনুযায়ী, দুই বছর পরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধিকাংশ সময় এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে কোনো কমিটি আড়াই বছর, আবার কোনো কমিটি তিন বছরের বেশি সময় পার করেছে। নিয়মের এ ব্যত্যয়ের ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের বিষয়েও ছাড় দিতে হয়েছে।
আরও পড়ুন >> প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ জয়-লেখক!
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স অনূর্ধ্ব ২৭ থাকলেও বিভিন্ন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় তা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ তিন সম্মেলনে মৌখিকভাবে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে অনূর্ধ্ব ২৯। তবে এ বয়সসীমা কত সময় কার্যকর থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। সর্বশেষ বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রণীত ঘোষণাপত্রে বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ করা হয়— দাবি ছাত্রলীগের একটি অংশের।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বয়স ২৭ বছর নির্ধারণ করা আছে। এরপর বিভিন্ন সময়ে সম্মেলন বিলম্ব হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন নেত্রী। তবে গঠনতন্ত্র কখনও সংশোধন করা হয়নি। প্রতিবারই নেত্রীর বিশেষ বিবেচনায় এটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের ভোটাভুটির মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধনের নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত তা ঘটেনি।’
ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশের দাবি, করোনা ও নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় অন্তত তিন বছর সময় নষ্ট হয়েছে। সে অনুযায়ী সংগঠনটির নেতৃত্বে আসার বয়স অন্তত ৩০ বা তার অধিক করা উচিত। বয়সের বিষয়ে ছাড় দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি ‘ম্যাচিউরড’ (পরিপক্ব) কমিটি গঠনের দাবি তাদের
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে সংগঠনটির ২৭তম সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসেন বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ওই সম্মেলনে বয়স ধরা হয় ২৯ বছর। ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন। ওই সম্মেলনেও বয়স ২৯ বছর নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২৯তম সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে ওই সময় বয়স বাড়িয়ে করা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তীতে সেটি আরও এক বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হয়। অর্থাৎ ২৮ বছর ৩৬৪ দিন।
আরও পড়ুন >> হঠাৎ জয়-লেখকের এত তাড়াহুড়া কেন?
ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশের দাবি, করোনা ও নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় অন্তত তিন বছর সময় নষ্ট হয়েছে। সে অনুযায়ী সংগঠনটির নেতৃত্বে আসার বয়স অন্তত ৩০ বা তার অধিক করা উচিত। বয়সের বিষয়ে ছাড় দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি ‘ম্যাচিউরড’ (পরিপক্ব) কমিটি গঠনের দাবি তাদের। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন— এ প্রত্যাশায় প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন তারা।
তবে তুলনামূলক জুনিয়র নেতারা বলছেন, বয়স আরও বাড়ালে অছাত্রদের হাতে চলে যাবে সংগঠন। এক্ষেত্রে জয়-লেখকের শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমে কম জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন তারা। আওয়ামী লীগের নেতারাও চান নিয়মিত ছাত্রদের হাতে থাকুক সংগঠন। তবে এবারও বয়স ছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে একটি বিষয়ে সবাই এক মত। সেটি হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নেবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় সংসদের এক উপ-সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ২৭। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি দুই বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর পর্যন্ত বিবেচনায় নিয়েছেন। এর মধ্যে সেটি সীমাবদ্ধ থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়। কারণ, নিয়মিত ছাত্র না হলে ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করা কঠিন হবে।’
আরও পড়ুন >> ‘অপরাধীরা’ লেখকের ঘনিষ্ঠ!
কেন্দ্রীয় সংসদের এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘২৯তম সম্মেলন দিতে আট মাস বিলম্ব হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ২৮ বছর এবং পরে ২৯ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা নির্ধারণ করেন। অতিরিক্ত তিন বছরসহ এবার সম্মেলন হচ্ছে প্রায় পাঁচ বছর পর। সে অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ হয়। এখন ৩০-এর মধ্যে যদি যোগ্য নেতা না পাওয়া যায় তাহলে ৩১ বছরও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। যেহেতু নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্মেলন হচ্ছে না, সেখানে বয়সের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নেই। ২৩-২৪ বছরে মাস্টার্স পাস করে সবাই চলে যায়। সেক্ষেত্রে ২৭ বছর থাকার দরকার নেই। ২৯ বছর তো আরও দুই বছর প্লাস। যেটি সর্বশেষ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। করোনা ও সম্মেলন যথাসময়ে না হওয়ায় ছাত্রলীগের যেসব নেতা ২৯ বছর পার করছেন, সাংগঠনিক নেত্রী যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, উনার কাছে আবেদন করলে তিনি সেটি বিবেচনা করতে পারেন। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।'
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম তখন গঠনতন্ত্রে বয়স ২৭ নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। আমাদের দর্শনটা ছিল নিয়মিত ছাত্রদের হাতে ছাত্ররাজনীতি থাকলে ক্যাম্পাসটা নিয়মিত হবে, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত হবে। সেটি এখনও টিকে আছে। তবে বয়সের একটু এদিক-সেদিক দলীয় সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে, সেটি হতে পারে। তবে এটি মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে সম্মেলন হচ্ছে, নতুন নেতৃত্ব আসবে।’
আরও পড়ুন >> গরু চুরির মামলায় ছাত্রলীগ নেত্রীর জামিন নামঞ্জুর
তবে এবারও বয়সে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, করোনার কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। এ সময় ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা হয়নি। এটি বিবেচনায় আগে বয়স নির্ধারণ ছিল ২৭, পরে তা ২৯ করা হয়। এবার এক বছর বা দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শেষ হয়ে যায়। এরপর কেউ চাইলে ‘ডাবল মাস্টার্স’ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এ কমিটি দুই বছরের জন্য দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নয় মাস বেশি হয়ে গেছে। আমি চাই না কেউ বঞ্চিত হোক। এ কারণে এবার এক বছর বাড়িয়ে ২৮ বছর করা হোক। এখন কোনো সেশনজট নেই। কাজেই আমি চাই, তোমরা এমন নেতৃত্ব খুঁজবে, যে নেতৃত্ব তোমাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবে।’
এইচআর/এমএআর/