জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালেন খালেদা জিয়া
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি জোটগত সম্পর্ক ছিন্ন করবে কি-না, এ নিয়ে দলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে আলোচনা। দীর্ঘ আলোচনা হলেও বিষয়টি নির্ভর করছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। কারণ তার একক সিদ্ধান্তেই গড়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক। তবে জামায়াত ছাড়া, না ছাড়ার বিষয়ে এতদিন স্পষ্ট করে কিছু না বললেও এবার বিএনপি চেয়ারপারসন নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। ফলে বিএনপি এবার জামায়াতের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে আর কোনো বাঁধা রইল না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইনে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে দলটির প্রায় প্রত্যেক সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত দেন। এরপর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত বিষয়ে হওয়া আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো খালেদা জিয়ার কাছে পাঠিয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে মুক্তিতে রয়েছেন। মুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকায় পারিবারিক পন্থায় বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা তার সঙ্গে দেখা করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত জানতে চান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইনে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির প্রায় প্রত্যেক সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত দেন। এরপর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত বিষয়ে হওয়া আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো খালেদা জিয়ার কাছে পাঠিয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নো সে’...
তখন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নো সে (No say, অর্থাৎ আমার কিছু বলার নেই)। দলের স্থায়ী কমিটিতে যদি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার মতামত এসে থাকে, তাহলে যা ভালো মনে করেন, করতে পারেন!’ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জামায়াত বিষয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্তেই তার আপত্তি নেই।
বিশ্বস্ত সূত্র আরও জানায়, জামায়াতের বিষয়ে নিজের অভিমত লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এখন তারা (বিএনপির শীর্ষনেতারা) জামায়াত ছাড়া, না ছাড়ার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যেখানে থাকছে না চেয়ারপারসনের আপত্তি। চলতি বছরেই জামায়াতের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে বিএনপি।
এখন পর্যন্ত আমাদের ২০ দলীয় জোট (জামায়াতসহ) অক্ষুণ্ণ আছে। সেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে ভিন্ন কিছু না শুনছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আছে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি
জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ২০ দলীয় জোট (জামায়াতসহ) অক্ষুণ্ণ আছে। সেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে ভিন্ন কিছু না শুনছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আছে। সুতরাং আমার মনে হয়, এ বিষয়ে এখনই খুব বেশি অনুমান করার সুযোগ নেই।’
জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো মতামত দিয়েছেন কি-না, জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে এর কারণ- অনেক দিনের সম্পর্ক হুট করে শেষ করা যায় না। তবে এ বছর জামায়াতকে ছাড়ার প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসে যাবে। এতদিন খালেদা জিয়ার মতামত নেওয়াই ছিল বড় বিষয়। এখন যেহেতু তার মতামত পাওয়া গেছে, ফলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ এবং সময় কম লাগবে।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠনে খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন আনোয়ার জাহিদ। ওই সময় বিএনপিতে তাকে মুদি দোকানি বলা হতো। কারণ তার কাছ থেকে সব দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে প্রস্তাব আসত
বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা, বিকল্প ধারা
তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, জামায়াতসঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে বিএনপির ওপর যারা বেশি চাপ দিচ্ছেন, এখন তাদের চাপে যদি আমরা জামায়াতকে ছেড়ে দেই, ভবিষ্যৎতে তারা অন্য কোনো বিষয় বা ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের চাপ দেবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? ফলে সবদিক বিবেচনা করেই আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। দুটি বিষয়কে সামনে রেখে এটি আমরা সহজভাবে করতে পারি। প্রথমটি হলো- জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে বিএনপির ওপর দীর্ঘদিনের দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতের অবস্থান ধর্মীয় উগ্রবাদী হিসেবে। দ্বিতীয়টি হলো- এতদিন ধর্মীয় রাজনীতি ও ইসলামী ভোট জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে, এই যুক্তিতে তাদের জোটে রাখা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এখন জামায়াতের হাতে নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও ভোট এখন অনেকাংশে হেফাজতে ইসলামের দখলে। এছাড়া বর্তমানে ধর্মীয় রাজনীতিতে জামায়াতের চেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোর। ফলে কূটনৈতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক ভোটের হিসাবের বিবেচনায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিএনপির সময় এখনই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র বলছে, বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের কূটকৌশলের কারণে বিএনপির তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তাদের সেই কূটকৌশল ছিল- উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতেরও প্রার্থী দেওয়া। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের পদে বিএনপি প্রার্থী দেবে না, এমন শর্তে জামায়াত চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিত। এভাবে তারা বিএনপির ঘাড় চেপে ধরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে। এসব কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিল তৃণমূলের নেতারা। এরপর বিদায়ী বছরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদস্যদের অনেকে মৌখিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের মতামত দেন। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লিখিতভাবে জামায়াতের আন্তর্জাতিক অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে কী কী কারণে বিএনপির জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার উচিত তাও উল্লেখ করেন সেখানে।
জামায়াত যতক্ষণ পর্যন্ত ৭১ সালে তাদের ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে জাতির সামনে ক্ষমা না চায়, বিএনপির উচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা। এই কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে বলে আসছি
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, একবার ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থী দিয়ে দেয়। এরপর তারা মির্জা ফখরুলকে বলেন, ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি ছেড়ে না দিলে জামায়াতের পক্ষে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া কঠিন হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট রাজনৈতিক ও ভোটের। তাদের সঙ্গে আদর্শিক কোনো জোট নয়। তবে বিএনপির জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
যেভাবে শুরু বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। সরকার গঠন করতে তখন বিএনপির কমপক্ষে আরও ১১টি আসনের প্রয়োজন ছিল। সেই সময় এ নিয়ে জয়ী বাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছিল। তারাও সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল; বিনিময়ে চেয়েছিল একজনকে মন্ত্রী বানাতে। কিন্তু জামায়াত শর্তহীন সমর্থন দিতে রাজি হয়। সেই থেকে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের সূচনা।
কিন্তু ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একজোট হয়ে জামায়াতও সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। এরপর কিছুটা ভাটা পড়ে বিএনপির-জামায়াত সম্পর্কে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান কাজী জাফরের মাধ্যমে আবার জামায়াতের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। ১৯৯৮ সালে খালেদা জিয়ার একক সিদ্ধান্তে জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে জোট থেকে এরশাদ বেরিয়ে গেলেও কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায়; যা পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি (জেপি) হয়। কিন্তু সেই সময় জামায়াতকে নিয়ে জোট গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান।
বিএনপি থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেনি। কিছু ঘটলে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারবেন
মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামী
এ বিষয়ে বর্তমানে বিকল্প ধারার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তারিখ এবং পুরো ঘটনাটি সম্পূর্ণ মনে নেই আমার। তবে যত দূর মনে পড়ে, একদিন খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসে বললেন, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনারা এর বিরোধিতা করবেন না। আমরা তখন বলি, কী সিদ্ধান্ত? তখন তিনি বললেন, আমি জামায়াতের সঙ্গে জোট করছি। তার এ কথায় বৈঠকে উপস্থিত আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতা বিশ্বাস করি, বিস্মৃত হই। তখন জামায়াতকে নিয়ে জোট গঠনের বিরোধিতা করি আমি, মান্নান ভূঁইয়া ও সাইফুর রহমান। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে আমরা তিনজন অনেক দিন বৈঠক করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হইনি।’
বি. চৌধুরী আরও বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠনে খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন আনোয়ার জাহিদ। ওই সময় বিএনপিতে তাকে মুদি দোকানি বলা হতো। কারণ তার কাছ থেকে সব দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে প্রস্তাব আসত।’
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, একদিন আনোয়ার জাহিদকে লক্ষ্য করে মান্নান ভূঁইয়া আফসোস করে বলেছিলেন, জামায়াতকে ঠেকাতে পারলাম না। আনোয়ার ভাইয়ের কাছে হেরে গেলাম!
স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, আনোয়ার জাহিদ জামায়াতের নেতাদের তার আত্মীয় বলে খালেদা জিয়ার বাসায় নিয়ে যেতেন। মূলত তার কারণে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হয়েছিল।
বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, ১৯৯১ সালে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ার জন্য মন্ত্রিত্ব না নিলেও ২০০১ সালের চারদলীয় জোট সরকারে জামায়াতের দুজন মন্ত্রী ছিলেন। আর এই জামায়াতের কারণে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরে তারা বিএনপির জোট থেকে বেরিয়েও যায়। জামায়াতের কারণে বাম দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোট গঠন হয়নি। বিএনপিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর’ বলে কটাক্ষ করার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখনও বিএনপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।
বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জামায়াত যতক্ষণ পর্যন্ত ৭১ সালে তাদের ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে জাতির সামনে ক্ষমা না চায়, বিএনপির উচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা। এই কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে বলে আসছি। কিন্তু তারা কারও কথা শোনে না। তবে জামায়াত যদি ক্ষমা চায়, তাহলে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর মতো তাদেরও এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে। অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের খুনের রেকর্ড নেই, যেটা জামায়াতের পূর্বপুরুষদের আছে। ফলে তাদেরকে আগে ক্ষমা চাইতে হবে।’
এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এখনও ২০ দলীয় জোটে আছি। গত মাসে জোটের দুটি বৈঠক হয়েছে।’
কিন্তু গত মাসে ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক হয়নি, জামায়াত তাহলে জোটের কোন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে— জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে জোটের শরিকদের ভালো সম্পর্ক। গত মাসে জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির এক সভায় আমরা উপস্থিত ছিলাম।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার পর তাকে একটি আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হচ্ছে। শুধু আমরা নয়, বিএনপির নেতারাও তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।’
খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষনেতা তার সঙ্গে দেখা করেছেন— এমনটি জানালে তিনি বলেন, ‘তার দরকার ছিল, তাই হয়তো দেখা করেছেন। আমাদের সঙ্গেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের যোগাযোগ হয়। কয়েকদিন আগেও জোটের কর্মসূচির বিষয়ে কথা হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে ২০ দলীয় জোট হতে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ এসেছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেনি। কিছু ঘটলে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারবেন।’
এএইচআর/এফআর/এমএআর