রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের দুর্বার গতি
রাজস্ব আহরণে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে আবারও রেকর্ড ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে।
প্রথম চার মাসে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বিভাগ মিলিয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলো।
প্রথম চার মাসে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বিভাগ মিলিয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলো
এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। গত জুলাই-আগস্টে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, করনেট বৃদ্ধি ও অটোমেশনের কারণে রাজস্ব আদায়ে এমন দুর্বার গতি— দাবি প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
যদিও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআর এখনও আট হাজার ৭৫৩ কোটি এক লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে। অর্জিত হয়েছে ৯০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঘাটতি ছিল ছয় হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক স্থপতি আনোয়ার হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও ধারাবাহিকভাবে বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশ্ব-অর্থনীতি বিবেচনা করলে আমি মনে করি, আমাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো। নিবিড় পর্যবেক্ষণ, অটোমেশন ও করের আওতা বাড়ানোর কারণে রাজস্ব আহরণে গতি ফিরেছে।
তিনি বলেন, এটা আমাদের সাময়িক হিসাব। চূড়ান্ত হিসাবে আহরণের পরিমাণ ও প্রবৃদ্ধি আরও বাড়তে পারে। কারণ, আমাদের অনেকগুলো খাত রয়েছে, যার হিসাব সঙ্গে সঙ্গে পাই না। সবকিছু মিলিয়ে সঠিক পথে হাঁটছে এনবিআর।
শুল্ক বিভাগের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসা মানেই আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাওয়া। মহামারি করোনার পর গত অর্থবছরের চেয়ে এবার তুলনামূলক গতি বেড়েছে। সে কারণে শুল্ক বিভাগে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এনবিআর কর্তার বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রফতানিতে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ পণ্য রফতানির পর অক্টোবরে তা আরও বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমমূল্যের পণ্য রফতানি হয়েছে। যা আগের করোনা ধাক্কার প্রথম বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারঘোষিত লকডাউনের ধাক্কা লেগেছিল গত ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে। ওই অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ে মাত্র ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল এনবিআর। যদিও সেই ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামলে উঠেছে রাজস্ব সংগ্রহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটি।
সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আমদানি-রফতানির শুল্ক খাত থেকে। এ খাতে ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আদায় হয়েছে ২৬ হাজার ৪০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সাড়ে ৮৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৫২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মোট ঘাটতি আট হাজার ৭৫৩ কোটি এক লাখ টাকা
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আয়কর থেকে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আহরণ অর্থাৎ আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯১ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে, ভ্যাটের ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ২৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার সাড়ে ৯১ শতাংশ।
তবে, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আমদানি-রফতানির শুল্ক খাত থেকে। এ খাতে ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আদায় হয়েছে ২৬ হাজার ৪০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সাড়ে ৮৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৫২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মোট ঘাটতি আট হাজার ৭৫৩ কোটি এক লাখ টাকা।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগে এনবিআরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যথাক্রমে এক হাজার ৯৭৮ কোটি, এক হাজার ৯৪৭ কোটি এবং দুই হাজার ৪১৭ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছিল। মোট ঘাটতি ছিল ছয় হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
শুধু অক্টোবরের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যেখানে তিন বিভাগে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে শুল্ক খাতে। আমদানির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই মাসে ২২ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ মাসে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগে প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৮ দশমিক ২৪ ও ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ করেছিল এনবিআর। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
আরএম/এমএআর/