রিজার্ভ ছাড়াল ৪৬ বিলিয়ন ডলার
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৯ জুন) দিনশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার; প্রায় চার হাজার ৬০৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে মজুত এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৩ মে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ওইদিন রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪০২ কোটি ডলার ছাড়ায়। এরও আগে অর্থাৎ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ বিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ডিসেম্বরে ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়ল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম বার্ষিক রিপোর্ট ১৯৭১-১৯৭৩ এর অষ্টম পৃষ্ঠায় বলা হয়, ‘স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরপর বাংলাদেশের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ছিল না। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করে নিয়েছে। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১৯৭৩ সালের ২৯ জুন এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।’
৪০ বছর আগে ১৯৮১-৮২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার যা এক মাসের আমদানি ব্যয়ের চেয়েও কম ছিল।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০০ কোটি (এক বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে তা দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর তা বেড়ে তিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের শেষে তা কমে ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে তা আরও কমে ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষের দিকে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন কমে এসে এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করে।
রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নামলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে— এমন আশঙ্কায় ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ইরান ও মালদ্বীপ— এ নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করে। আকুর বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ কিছুটা কমে যায়।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৭৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ফলে চলতি অর্থবছরে (২৮ জুন পর্যন্ত) রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৪৫৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ নয় হাজার কোটি টাকার বেশি)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমকি ৪০ শতাংশ।
এসআই/এনএফ/এমএআর/