ঈদের কেনাকাটায় অনলাইনে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে

যানজট, মার্কেটে ভিড় ও বাড়তি ঝামেলার কারণে ঈদের কেনাকাটায় অনেকেই এবার অনলাইন মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। রমজান মাসে অফিস এবং কর্মব্যস্ততার জন্য দিনে সময় কম থাকে, তাছাড়া ইফতারির পর ক্লান্তিতে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে কেনাকাটা করার ইচ্ছে থাকে না। এ কারণে প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে এখন অনেকেই ভার্চুয়ালি ঈদের কেনাকাটা করে নিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
আগে যেখানে ঈদের কেনাকাটা ঘুরে ঘুরে করা হত, বর্তমানে ঘরে বসেই অর্ডার করা যায় অনলাইনে। জামাকাপড় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস এখন এক ক্লিকেই ঘরের দরজায় চলে আসে। এই সুবিধার কারণে অনেক ক্রেতাই এবার ঈদের কেনাকাটা অনলাইনে সেরে নিচ্ছেন। প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হওয়ার কারণে প্রতি বছরই অনলাইনে কেনাকাটার সংখ্যা বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
এবারও ঈদুল ফিতরের বাজারে অনলাইন কেনাকাটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা পছন্দের পণ্য কিনতে পারেন এবং বিভিন্ন অফার ও মূল্যছাড়ের সুবিধা পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা নওশিন তাবাসসুম বলেন, এবার অফিসে কাজের চাপ বেশি এবং বাইরে ঈদের বাজারে অতিরিক্ত ভিড় রয়েছে। এছাড়া রমজান মাস, অফিস করতেই দিন শেষ হয়ে যায়। ইফতারির পর ক্লান্তিতে আর বাইরে বের হওয়ার ইচ্ছে হয় না। সব মিলিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য সব কেনাকাটা অনলাইনে সেরে ফেলেছি।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদের বাজারে নামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচুর বেচাবিক্রি হচ্ছে। পোশাক, শাড়ি, গহনা, কসমেটিকস, জুতা, ব্যাগ, ইলেকট্রনিক্সসহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মার্কেট প্ল্যাটফর্মে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, দেশে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রি করছে।
অনলাইন শপ বা ফেসবুক পেজ ছাড়াও, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানগুলোও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছে।
গাউছিয়া মার্কেটে মা ক্লোথ স্টোরের ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান যুগে অনলাইন শপিং অপরিহার্য। আমাদের দোকানগুলো একাধিক ফেসবুক পেজ চালাচ্ছে এবং অনলাইনে ভালো সাড়া পাচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দের পণ্য দেখে ইনবক্সে অর্ডার দেন এবং ই-কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থায় ক্রেতাদের আর দোকানে আসতে হয় না।
বর্তমানে দেশের ই-কমার্স বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। ২০২৬ সালের মধ্যে তা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে
রঙ্গিলা শপের স্বত্বাধিকারী মিশু ইসলাম বলেন, ভিড়, বিড়ম্বনা, দরদাম এই সব ঝামেলা এড়াতে ক্রেতারা এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। এতে ক্রেতারা পছন্দের পণ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতিযোগিতার কারণে অনলাইনে দামও কম থাকে, তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
তিনি বলেন, ঈদের বাজারে অনলাইনে পণ্য কেনার ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। অধিকাংশ ক্রেতা ড্রেস কিনে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
অনলাইন ফরিওয়ালা নামের একটি অনলাইন শপের স্বত্বাধিকারী নূরুন নাহিদ বলেন, ঈদের অনলাইন কেনাকাটায় সাড়া অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে, চাকরিজীবীরা বোনাস পাওয়ার পর কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতিযোগিতা বেশি। তারা ভালো কালেকশন নিয়ে এলেও, অনেক ক্রেতা ব্র্যান্ডের কাছে চলে যায়।
অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা করেছি। এভাবে কেনাকাটা করা অনেক সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী। তবে, সরকারের উচিত অনলাইনের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং ক্রেতাবান্ধব নীতিমালা তৈরি করা।
বিভিন্ন সার্ভে অনুযায়ী, দেশের ই-কমার্সের বাজার দ্রুত বাড়ছে। ২০২১ সালে বাজার ছিল ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ই-কমার্স বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেট ডটকমের তথ্য বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের ই-কমার্স বাজার ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
এদিকে দেশে প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা চলছে, যা এফ-কমার্স নামে পরিচিত। এছাড়া দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির অধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে কেনাকাটা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এএসএস/এমএসএ