মূল্যস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের মানুষের গায়ে বেশি লাগে
পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের মানুষের গায়ে বেশি লাগে। কারণ তাদের আয়ের বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হয় খাদ্যপণ্য কেনার পেছনে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে তাদের মজুরি বেড়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। প্রকৃত মজুরি কম হওয়ায় পরিস্থিতি তাদের জন্য কষ্টকর।
গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেনতিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, গত প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। তবে সংকোচন হয়নি। জুলাই মাসে রাজনৈতিক কারণে শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল না। মজুরি, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হিসাব করার দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কোনো তথ্য তিনি পর্যালোচনা করেন না; যা আসে অনুমোদন দিয়ে দেন। বিবিএস আইন সংশোধনের করতে যাচ্ছে সরকার। এতে মূল্যস্ফীতি, জিডিপি কিংবা কর্মসংস্থান সব তথ্য প্রকাশ করবে বিবিএস।
আরও পড়ুন
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রবাসী আয় থেকে গ্রামে অর্থ সঞ্চালন হচ্ছে। এতে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এটি অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে রাজনীতি। সারাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ফলে অর্থপ্রবাহ বাড়ছে। গতি এসেছে রপ্তানি আয়েও। এতে আগামীতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যায়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির বড় ক্ষতি হলো জনমিতির সুবিধার পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে না পারা। কর্মক্ষম যুবশক্তির আধিক্যের এ সুবিধা হয়তো আর ১০ থেকে ১৫ বছর পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন যুব সমাজের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ নষ্ট হয়েছে। তবে ভরসার জায়গা হচ্ছে– গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় উত্তরণ হলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সেটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। সংস্কার কিংবা নির্বাচন, যা কিছুই বলা হোক না কেন, মূল কথা হচ্ছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরও বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নতুন করে একটার পর একটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ট্রাস্টের মাধ্যমে। এখানে সরকারের করার কিছু নেই। তবে ট্রাস্টের সবাইকে যদি বিদায় করা হয়, তাহলে থাকল শুধু ছাত্ররা– এটা তো একটা বড় সংকট। এভাবে চলতে থাকলে এ সংকট কোথায় গিয়ে থামে বলা যায় না।
উপদেষ্টা বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা হবে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা সম্ভব না হলে বিদেশিদের সহায়তা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কেন জানি বিগত দিনে বাপেক্সকে শক্তিশালী না করে এলপিজি আমদানি করা হয়। অথচ ভোলা থেকে কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।
তিনি বলেন, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে নতুন করে জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট চিত্র তৈরি করা দরকার। শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলো খুব বেশি সংযুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুবিধা পেতে হলে এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ দেখাতে হবে। এ বিষয়ে একনেকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে সরকার জোগান দেবে ৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ ২০৬ কোটি টাকা। বাকি ৪০৯ কোটি টাকা জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সচিবরা বৈঠকে ছিলেন।
এআইএস