আবেদ ও পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তার অঢেল অর্থের খোঁজে বিএফআইইউকে চিঠি
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ও পিএসসির বরখাস্ত পাঁচ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের নগদ অর্থ, এফডিআর, সঞ্চয়পত্রসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ নিচ্ছে সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক।
এছাড়াও বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস খতিয়ে দেখতে গত ২৯ জুলাই দুদক উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, দুদকের চিঠিতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদ আলী ও তার ছেলে, পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অর্থের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে আবেদ আলীক বরখাস্ত করা হয়েছিল। নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদের লিখিত পরীক্ষা ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। তখন এক পরীক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের অবৈধ উত্তরসহ চারটি লিখিত উত্তরপত্র হাতেনাতে আটক করা হয়। ওই মামলার তদন্তে সৈয়দ আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ মেলে। এরপর তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এক সময় কুলির কাজ করা আবেদ আলী গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। এরপর প্রশ্ন ফাঁস চক্রে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিজ এলাকায় শিল্পপতি হয়ে যান।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত অভিযোগে আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৯ জুলাই রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে তারা গ্রেপ্তার হন।
একই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় পিএসসির দুজন উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে।
ব্যবস্থা নিতে দুদকে পিএসসির চিঠি
অভিযুক্ত উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর, জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই দুদক সচিবকে চিঠি দিয়ে এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে পিএসসি।
আলোচিত আবেদ আলীর যত সম্পদ
পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্ন ফাঁস করে অন্তত ৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকায় ছয় তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন, সরকারি জায়গা দখল করে গড়েছেন ডেইরি ফার্ম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডে বিসমিল্লাহ টাওয়ার নামে একটি ৯ তলা ভবনে সপরিবার থাকেন আবেদ আলী। পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন তিনি।
সিআইডিসহ বিভিন্ন সূত্র বলছে, আবেদ আলী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার হলেও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সিরাজগঞ্জ উল্লেখ করেছিলেন। তিনি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক সময় কুলির কাজ করা আবেদ আলী গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। এরপর প্রশ্ন ফাঁস চক্রে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিজ এলাকায় শিল্পপতি হয়ে যান।
আরও পড়ুন
দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিএসসি’র প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি অত্যন্ত আলোচিত। দুদকের যে কোনও অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নথিপত্র চেয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়ে সিআইডির তদন্ত চলমান। এ ঘটনায় যেসব রাঘব বোয়ালদের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে তা খতিয়ে দেখার মূল দায়িত্ব সিআইডি পালন করছে। দুদক অভিযুক্তদের অবৈধ সম্পদসহ অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
তিনি বলেন, তথ্য যাচাই করে অবৈধ সম্পদ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নথিপত্র চেয়ে আরও চিঠি দেওয়া হবে।
আরএম/এমএসএ