চড়া নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে আনার লক্ষ্য
দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে।
আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে, অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন
প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে, বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতি রোধে উন্নত দেশে সুদের হার বাড়তে থাকলে টাকার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডেপ্রিসিয়েশন হওয়ায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে।’ এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে সরকার, প্রস্তাবে এমনটাই জানানো হয়েছে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ গতি ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে যৌক্তিক সব সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি আমাদের গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং মধ্যমেয়াদে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।’
বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাংক খাত বেছে নিয়েছে সরকার। ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এটি বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ঠিক করা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এসআই/এসএসএইচ