স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে
দেশে করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের আকারও ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে।
এ তহবিলের বড় একটি অংশ ভ্যাকসিন আমদানি, সংরক্ষণ ও উৎপাদন, টিকাদান পরিচালনা এবং প্রথম সারির যোদ্ধাদের ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যয় করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনা মোকাবিলায় সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা করছে। যেখানে চলতি বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ ছিল আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, করোনার সম্মুখযোদ্ধাদের ভাতা এবং তাদের বিভিন্ন প্যাকেজ দেওয়ার জন্য বড় আকারের তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও করছে সরকার।
বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের আকার বাজেটে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মহামারি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠলে এবং করোনার তৃতীয় ঢেউ দেশে আঘাত হানলে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হবে। তাই সরকারের কাছে আগামী অর্থবছরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি তহবিলের ব্যয় বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
এছাড়া চলমান করোনা মহামারিতে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমবাজার, আর্থিক ও সামাজিক খাত সচল রাখতে এবং করোনার টিকার জন্য বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৫০০ মিলিয়ন ডলার (৪২২১ কোটি টাকা) করোনাভাইরাসের জরুরি তহবিল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে আগামী বাজেট উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ারও।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় জরুরি তহবিল বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আওতা সম্প্রসারণ ও পরবর্তী বছরের খাদ্য সংকট মেটাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যথাসময়ে অর্থ ছাড় ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা পৌঁছানো।’
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপ অনুসারে, দেশের প্রায় দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় এ হার আরও বাড়তে পারে। সেজন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আরও প্রসারিত করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
বর্তমান বাজেটে মহামারি মোকাবিলায় জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার এককভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। পরে এখান থেকে ১৫ শতাংশ বা ১৫০০ কোটি টাকা নিয়ে রেমিট্যান্স প্রণোদনা হিসেবে ব্যয় করে। সে হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৫শ কোটি টাকা।
এদিকে সরকার চলতি অর্থবছরের মতো আগামীতেও প্রথম সারির কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান অব্যাহত রাখবে। সবশেষ বাজেটে মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া শতাধিক কর্মচারীর পরিবারকে এ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য বরাদ্দ থেকে দুই মাসের মূল বেতন এবং ভাতা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫৩ জনের। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ জন।
আরএম/এফআর