ডলারের দাম আর বাড়বে না, ‘কমবে’
মার্কিন ডলার সংকটে চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ধারাবাহিকভাবে ডলারের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিত্যপণ্যের বাড়তি ব্যয় মেটাতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে ডলারের দাম না বাড়িয়ে কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নিয়মিত বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছে ব্যাংক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাফেদা’র চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিম, এবিবি’র চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ডলার সংকট চলছে। এর সঙ্গে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তাই যেকোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে ডলারের দাম (রেট) না বাড়িয়ে কমানোর ওপর জোর দেন বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ডলার সংকট চলছে। এর সঙ্গে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তাই যেকোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে ডলারের দাম (রেট) না বাড়িয়ে কমানোর ওপর জোর দেন বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিবিএস’র হিসাব বলছে, গত আগস্ট মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো উঠেছে দুই অঙ্কের ঘরে।
একদিকে ডলারের সংকট, অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এমন অবস্থায় ডলারের দাম বাড়ানো হবে, নাকি কমানো হবে— জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। এটি নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের মূল্য লক্ষ্য। এমন অবস্থায় ডলারের দাম বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। কীভাবে দাম কমানো যায়, সেই চেষ্টা চলছে। এজন্য রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।’
‘আগস্টে রেমিট্যান্স কম এসেছিল। তবে, এখন প্রবাহ বাড়ছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় কমছে। আশা করছি, ডলারের সংকট কেটে যাবে।’
বাফেদা’র চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিমও ডলারের দাম কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন ডলারের বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে সামনে দাম কমবে, বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির মূল সমস্যা হলো বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ডলারের সংকটের ফলে এর দাম বেড়ে যাওয়া, এটি সাময়িক। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও সমাধান হয়নি। উল্টো ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে দেশ।
ডলারের দাম ও রিজার্ভ পরিস্থিতি
খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, মহামারি করোনার আগের বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের প্রবাহও বেশ ভালো ছিল। একই সময় রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পৌঁছে। এসব নিয়ে বড় ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে সরকার। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মালদ্বীপকেও ঋণে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।
২০২১ সালের শেষদিকে সার্বিক অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব এবং পরবর্তীতে ডলারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদাও বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে। এর মধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয় সরকার।
এদিকে, দীর্ঘদিন ডলারের দর কৃত্রিমভাবে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে এটি বেড়ে ১১০ টাকায় ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের দাম বাড়িয়েছে ১৫ টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে প্রতি ডলারের দাম যেখানে ৯৫ টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকায়। তবে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৩ টাকায়। খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়।
কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলার। এক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম ধরে রেখেছিল। পরে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। বেশি হারে দাম বেড়েছে। এটিই প্রমাণ করে যে, কৃত্রিমভাবে ধরে রেখে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনো সমাধান নয়। এর ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।’
‘বাজারের সঙ্গে এখনও ডলারের রেটের ব্যবধান রয়েছে। যখন ডলারের দাম বৈধ চ্যানেলে কম থাকবে তখন হুন্ডি উৎসাহিত হবে। রেমিট্যান্স কমে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। আইএমএফের ঋণের যে শর্ত আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এখন যদি কোনোভাবে আমরা ডলারের রেট ধরে রাখতে চাই, এটি ঠিক হবে না। আগেও ডলারের রেট ধরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফল ভালো হয়নি। আগামীতেও ভালো হবে না। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো হবে’— বলেন এ অর্থনীতিবিদ।
এদিকে, ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের জুলাই থেকে বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার ওপর ৭৫ থেকে শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এ মার্জিনের টাকা দিয়ে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া যাবে না। এ ছাড়া বড় এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তথ্য নিয়ে তার সঠিকতা যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ডলার সংস্থান ছাড়া ব্যাংকগুলোকে এলসি না খুলতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলারের প্রকট সংকট দেখা দেয়। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে
আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স
২০২১-২২ অর্থবছরে আট হাজার ২৫০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ডলারের সংকট থাকা এবং একই সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আমদানি ব্যয় ছয় হাজার ৯৫০ কোটি ডলারে নামে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৩০০ কোটি ডলারের আমদানি কমে। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয় চার হাজার ৯২৫ কোটি ডলারের। পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৩০৯ কোটি ডলার বেড়ে পাঁচ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
এ সময় প্রবাসী আয় অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও হয় অল্প। আগের অর্থবছরের চেয়ে এর পরিমাণ বাড়ে প্রায় ৬০ কোটি ডলার। ফলে গত বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানির জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। অপরদিকে, ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন থেকে কমে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ কমছে, পরিশোধ বাড়ছে
রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা, ডলার সংকট ও নানা নীতিগত কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণের প্রবাহ কমেছে। তবে, আগের নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধের পরিমাণও বেড়েছে। একই সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ মিলত এখন ওই সুদ ৯ শতাংশে উঠেছে। গত দুই বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সবমিলিয়ে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনশেষে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ প্রায় ৪১০ কোটি ডলার বা ৩০ শতাংশ কমে এক হাজার ৩৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৭৭৬ কোটি ডলার। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৮৬৯ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১২ শতাংশ কমেছে। এসেছে মাত্র ১৬১ কোটি ডলার। সবমিলিয়ে গত জুনশেষে আর্থিক হিসাবে ২১৪ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত বছরের জুনশেষে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল এক হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। মূলত আর্থিক হিসাবের ঘাটতিই দেশে ডলারের বাজারে চাপ তৈরি করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলারের প্রকট সংকট দেখা দেয়। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি
বাজারের ডলার সংকট কাটাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ডলার বিক্রি করেছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এভাবে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সঞ্চয় করা রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
প্রকৃত রিজার্ভ ২১.৭০ বিলিয়ন ডলার
চলতি মাসের শুরুতে অর্থাৎ গত ৫ সেপ্টেম্বর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩১৮ কোটি ডলার। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিল ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। ফলে আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৭১ কোটি ডলারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে। এ ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। ঋণশর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল, জুনে প্রকৃত রিজার্ভ দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা দুই হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৮০ কোটি ডলারে উন্নীত করা। কিন্তু এখন রিজার্ভ আছে দুই হাজার ১৭০ কোটি ডলার
সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুলব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত নয়— এসব খাতে বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ৫৯২ কোটি ডলার দেওয়া আছে, যা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে। এ ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। ঋণশর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল, জুনে প্রকৃত রিজার্ভ দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা দুই হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৮০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু এখন রিজার্ভ আছে দুই হাজার ১৭০ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স-রপ্তানি ডলারের এক রেট
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্য এখন থেকে এক রেটে ধরা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় পাচ্ছেন। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ডলারের মূল্য ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকায়।
এসআই/