বিদেশ থেকে লাগেজে সোনা আনার খরচ বাড়ছে
স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ রোধ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন আনতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুল সংশোধন করে স্বর্ণবার আনার ক্ষেত্রে ভরি প্রতি শুল্ক ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অর্থাৎ বর্তমানে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার আনা যায়। এই শুল্ক বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে ২০ ভরি স্বর্ণের জন্য ৮০ হাজার টাকা শুল্ক গুণতে হবে, যেখানে বর্তমানে দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা।
একই সঙ্গে ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি ওজনের একটির বেশি স্বর্ণের বার আনলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিধান আনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : দুবাই থেকে স্বর্ণ যেভাবে আসে, জড়িত যারা
অবশ্য স্বর্ণালংকার আনার সুযোগ অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্ক-কর ছাড়াই দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন। তবে এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনা যায় না।
মূলত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন আনা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফিরে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যবহার করে ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করেন। বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। বিনিময়ে কমিশন ও স্বর্ণের বেশি দাম পাচ্ছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিশিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমছে। যে কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ও স্বর্ণের অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ রোধে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার আনা যায়। এই শুল্ক বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে ২০ ভরি স্বর্ণের জন্য ৮০ হাজার টাকা শুল্ক গুণতে হবে, যেখানে বর্তমানে দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬ প্রণয়ন করে। সেই বিধিমালায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আনার ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছে,
স্বর্ণবার : স্বর্ণবারের ক্ষেত্রে প্রতি ১১.৬৭ গ্রামের জন্য ২ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এভাবে ঘোষণা দিয়ে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ আনতে পারবে যাত্রী। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। ঘোষণা না দিয়ে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় স্বর্ণবার বহনকারী ধরা পরলে তা চোরাচালান হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধের দায়ে শুল্ক-কর আরোপসহ অতিরিক্ত হিসেবে পণ্যমূলের দ্বিগুণ জরিমানা আরোপ হতে পারে।
আরও পড়ুন : আসা-যাওয়ার খেলায় পাচার ২০০ কেজি স্বর্ণ
স্বর্ণালংকার : শুল্ক কর পরিশোধ না করে একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম পর্যন্ত (এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হবে না) শুল্কমুক্ত স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রামের জন্য প্রায় ২ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বাণিজ্যিক পরিমাণ বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক করা স্বর্ণালংকার পরে অ্যাডজুডিকেশন প্রক্রিয়ায় শুল্ক-কর এবং অর্থদণ্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।
আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। মোট জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। যা চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা বেশি। বিশাল আকারের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। যেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এনবিআর, এনবিআরবহির্ভূত এবং করবহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন : রিটার্ন জমা স্লিপ পেতে গুনতে হবে ২ হাজার টাকা
অন্যদিকে আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ( এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এনবিআর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে আগামী বাজেটে। টাকার অংকে বাড়তি ৬০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে। এছাড়া এনবিআরবহির্ভূত করের মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আশা করছে সরকার।
আরএম/এসকেডি