অর্থ প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মুদ্রানীতি ঘোষণা
অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্য নিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্য কমিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি (মনিটরি পলিসি স্টেটমেন্ট) ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও নির্বাহী পরিচালকরা।
করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর ধরে তা এক বছরের জন্য করা হচ্ছে। এবারও মুদ্রানীতি এক বছরের জন্য ঘোষণা করেছেন গভর্নর ফজলে কবির। এটি বর্তমান গভর্নরের মেয়াদের শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উপকরণ ব্যবহার ছাড়া তেমন কোনো করণীয় নেই। যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান হলো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কম হারে ঋণ দেওয়া। এজন্য আগামী অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত মে মাস পর্যন্ত সাড়ে ১২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমানো হয়নি, বরং বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহে নিরুৎসাহিত করার তাগিদ দিয়েছেন গভর্নর।
গভর্নর জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি হার হিসেবে বিবেচিত রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ।
আসছে অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
আসছে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণে জোর দেবে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এ অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আছে।
এসআই/আরএইচ