আমার ছেলের মাথায় বিদেশ যাওয়ার ভূত ঢুকাইছে দালাল চক্র
সমুদ্রপথে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন ফরিদপুরের তিন যুবক। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে তাদের সর্বশেষ অবস্থান ছিল লিবিয়ায়। এই তিন যুবকের বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দালালের মাধ্যমে নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতুব্বরের ছেলে ফয়সাল মাতুব্বর (২১), ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (২২) এবং মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২১) লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে বিমানযোগে লিবিয়া যান। তারপর লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য ২৭ জানুয়ারি রওনা হন। ওই দিন লিবিয়া পৌঁছে তারা সেখান থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
আবার সেদিনই জাহাজে করে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানান। এরপর পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি তারা। তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে পরিবারের সদস্যরা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের শঙ্কা তাদের সন্তান জীবিত আছে নাকি মারা গেছে, এ নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কথা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে। তারা জানান, তিন যুবককে এই পথের বিস্তারিত জানান এবং প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখান লিবিয়াপ্রবাসী নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের ছোট নাওডুবি গ্রামের চোধুরী মাতুব্বরের ছেলে ইলিয়াস মাতুব্বর, হান্নান মাতুব্বরের ছেলে শাহিন মাতুব্বর এবং চুন্নু মাতুব্বরের ছেলে সোহেল মাতুব্বর।
তারা আরও জানান, লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হওয়ার খবরে নগরকান্দা উপজেলা ছোট নাওডুবি এলাকার দালাল চক্রের পরিবারের সদস্যরা রাতের আঁধারে গবাদিপশু, টাকাপয়সা, মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
নিখোঁজ নাজমুল মিয়ার বাবা মাজেদ মিয়া বলেন, আমরা তো ইতালি যাওয়ার এত কৌশল জানতাম না। নানা সুবিধার কথা বলে আমার ছেলের মাথায় বিদেশ যাওয়ার ভূত ঢুকাইছে দালাল চক্র। চুক্তি অনুযায়ী ১০ লাখ টাকাও তারা নিয়ে গেছে। এখন টাকার চিন্তা বাদই দিলাম। আমার ছেলেই নিখোঁজ। জানি না আমার ছেলে এখন কী অবস্থায়, কোথায় আছে। বেঁচে আছে না মরে গেছে।
নিখোঁজ ফয়সালের বাবা ফারুক মাতুব্বর বলেন, দালালরা আমার ছেলেকে বিদেশে নেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। তিনজনের কাছ থেকে মোট ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে। লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় আমার ছেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শেষ কথা হয় এ বছরের ২৭ জানুয়ারি। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দালালদের বাড়ি ছোট নাওডুবী গ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি তারা সবাই ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাইচাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা খান বলেন, নিখোঁজ তিন যুবকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে তিন যুবক কথা না বলায় পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় আছেন। সমুদ্রপথে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কি না, এ শঙ্কায় পরিবার।
আপনার ইউনিয়নে যুবকরা বিপথগামী হচ্ছে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আমাদের আজ শনিবার মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। পরে আমরা তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
জহির হোসেন/এনএ