টিকা নিতে প্রতি শিক্ষার্থীকে দিতে হচ্ছে ১৬০ টাকা
সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগর উপজেলায় এইচএসসি ও আলীম পরীক্ষার্থীদের মাঝে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছে। বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বেসরকারি এনজিও সংস্থা গণমুখী ফাউন্ডেশনের হলরুমে শিক্ষার্থীদের মাঝে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা গ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের টিকা ফি বাবদ দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা আর ফটোকপি বাবদ ১০ টাকা।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আর্থিক বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পৃক্ত নয়। আর শিক্ষকরা বলছেন, নাশতা, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এনজিও সংস্থা গণমুখী ফাউন্ডেশনের হলরুমে ১৫০০ শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদান করা হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৬০ টাকা হিসেবে উত্তোলন করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জসিম বলে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে করোনা টিকার ফি বাবদ ১৫০ টাকা ও ফটোকপি করার জন্য ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাদরাসা থেকে ৫৫ জন আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে পাঁচজন বাইরে থেকে টিকা নিয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে ৫০ জন আজ টিকা নিতে এসেছি।
সে আরও বলে, প্রত্যেকেই ১৬০ টাকা করে দিয়েছে। সব টাকা আমার কাছে রয়েছে। টাকাগুলো মাদরাসার হুজুর আতিকুল্লাহর কাছে দিতে হবে। শুধু আমরা নই, সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকার ফি জমা দিয়েছে। ২ ডিসেম্বর থেকে আমাদের আলিম পরীক্ষা শুরু হবে। তার আগেই এই টিকা গ্রহণ করতে হচ্ছে।
করোনা টিকা বাবদ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে পাতাখালি ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আতিকুল্লাহ্ বলেন, ১০০০ টাকা নওয়াবেকী মাদরাসার অধ্যক্ষ (প্রিন্সিপাল) মাওলানা ওহিদুজ্জামান সাহেব খরচ বাবদ নিয়েছেন। বাকি সব টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হবে। অতিরিক্ত কোনো টাকা তারা নেবে না বলে জানিয়েছেন।
করোনা টিকা প্রদানের সমন্বয়কারীদের একজন মাওলানা ওহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এখানে ৮টি মাদরাসা ও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ৯৩ জন। সব প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে, সেই সংখ্যা আমার জানা নেই। তবে ১৫০০ শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার টার্গেট রয়েছে।
টাকা উত্তোলন করা হয়েছে কিসের জন্য, এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন করে মনিটর করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তার কাছে টাকা জমা দিচ্ছে। শিক্ষকরা শুধু সুপারভিশন করছেন। টিকা কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের যাতায়াত, নাশতা-দুপুরের খাওয়াসহ কিছু খরচ রয়েছে। সেগুলো শিক্ষার্থীদের টাকায় একটি ফান্ড করা হয়েছে। খরচের টাকা সেই ফান্ড থেকে খরচ করা হচ্ছে, বাকি টাকা তাদের ফেরত দেওয়া হবে। আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অজয় কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের ২৪০০ টিকা দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। আজ (বুধবার) বেসরকারি সংস্থা নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের হলরুমে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ১২০০ থেকে ১৫০০ টিকা দেওয়া হবে। কয়টি প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে, তার সঠিক সংখ্যাটা আমি বলতে পারছি না। তালিকাটা আমার হাতে নেই।
টিকার মূল্য নির্ধারণ করে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আর্থিক কোনো কিছুর সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পৃক্ত নয়। আমরা শুধু ফাইজারের প্রথম ডোজ করোনা টিকা সরবরাহ করছি ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাণের শিক্ষকরা বলতে পারবেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরি মিটিংয়ে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আকরামুল ইসলাম/এনএ