শ্রেণিকক্ষের সংকট, স্কুল ভবনে বসবাস করেন প্রধান শিক্ষক
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার ফজিলাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেল্লাল হোসেন। আবার কোনো টেন্ডার বা নিলাম না ডেকে বিদ্যালয়ের অপর ভবনের একাংশ ভেঙে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষক অবশ্য দাবি করেছেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়ের একটি তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা দখল করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলে, নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ থাকা সত্ত্বে অন্য ভবনে গিয়ে তাদের ক্লাস করতে হয়। কক্ষ-সংকটের কারণে অনেক ক্লাস মিস দিতে হয় তাদের। বিদ্যালয়ের ভবন দখল করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় অভিভাবকরা।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, কোনো নিলাম ছাড়াই সরকারি বিধিবিধান বা পরিপত্র অনুসরণ না করে নতুন ভবন নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বিদ্যালয়ের পুরোনো এ ভবনের একাংশ ভেঙে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
বিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, তজুমদ্দিন উপজেলায় অবস্থিত ফজিলাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য একতলা, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলা ভবন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অসুবিধা ও বিলম্ব ঘটায় ওই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন একটি পঞ্চম তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের বরাদ্দ হয়।
এ ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এস এমপি। কিন্তু বরাদ্দের পর ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ ঝামেলায় দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের পাশের খালি স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে, নতুন ভবনের আরও জায়গার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদসহ একাংশ ভেঙে বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, আমি ২০১৭ সালে মৌখিকভাবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল আহমেদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। তার অনুমতিতেই পরিবার নিয়ে বিদ্যালয়ে বসবাস করছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত আছে।
আর বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ভোলা জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের পরামর্শক্রমে শিক্ষক পরিচালনা কমিটির একটি রেজল্যুশনের মাধ্যমে ভবনের একাংশ ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সে অনুযায়ী ভবনের একাংশ ভাঙা হয়েছে।
তজুমউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিয়ম বেগম বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের কাছে বিষয়টি জেনেছি। তিনি এখানে কীভাবে থাকছেন, বিষয়টি খোঁজ নেব।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাধব চন্দ্র দাস বলেন, প্রধান শিক্ষক কেন শ্রেণিকক্ষে বসবাস করবেন? তবে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হবে।
তবে ভবন ভাঙার বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি বিধিবিধান ও পরিপত্র অনুসরণ না করে ভবন ভাঙা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত কাজ। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ