ভয়ংকর সময় যাচ্ছে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে
‘বর্তমানে পল্লিতে ভয়ংকর খারাপ সময় পার হচ্ছে। নানা কৌশলে পল্লির বাসিন্দারা প্রতারিত হচ্ছে। সর্বশেষ রিতু খুনের ঘটনায় পল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পল্লির যৌনকর্মীরা আগে কখনো জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবেনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে পল্লিতে কয়েকটি খুনের ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বললেন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাসিন্দা ও যৌনকর্মী চাঁদনী আক্তার (ছদ্মনাম)।
জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লি নামে পরিচিত গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লি। বর্তমানে এই যৌনপল্লিতে প্রায় দেড় হাজার যৌনকর্মী বসবাস করেন। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তি এখানে যৌনসেবা নিতে আসেন।
দৌলতদিয়ায় ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’ নামের একটি অনুমোদিত (রেজিস্টার্ড) সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে এই যৌনপল্লিতে যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ সরদারণী। এসব সরদারণীর অধীনে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে যৌনকর্মী কাজ করেন। এসব সরদারণী বা বাড়িওয়ালীর প্রতিদিন সর্বনিম্ন আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া অবস্থাশালী বাড়িওয়ালীদের আয় দিনে আনুমানিক ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।
বর্তমানে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে খুন আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান একাধিক যৌনকর্মী। গত ৯ অক্টোবর নিজ ঘরে খুন হন যৌনকর্মী রিতু বেগম। এরপর থেকে যৌনকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক শুরু হয়। খুনের পর গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে মামলার তদন্ত করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান।
রিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, যৌনকর্মী রিতু বেগমকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দৌলতদিয়া এলাকার দুখিনী বেগম (৪২) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী ও শেখ রিপন (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুখিনী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে হত্যার সঙ্গে শেখ রিপন জড়িত বলে তার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। তারা দুজনই বর্তমানে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে রয়েছেন। রিতুর ঘরে চুরির উদ্দেশ্যেই এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
যৌনপল্লিতে খুন প্রসঙ্গে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির বাসিন্দা রুপা বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, যৌনপল্লিতে রাতে অনেক খদ্দের থাকে। তারা অনেকেই অপরিচিত। তাদের সঠিক উদ্দেশ্য কী, তা জানা যায় না। রিতু খুনের পর আমাদের এখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক যৌনকর্মী রাতে ঘর থেকে পল্লির বাইরে যায় না।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লি ঘিরে কাজ করে ‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’ নামের একটি সংস্থা। কর্মীর জীবনমান উন্নয়নসহ নানা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির সভাপতি ঝুমুর বেগম বললেন, বর্তমানে পল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ ভালো। দু-একটি বিছিন্ন ঘটনা তো অনেক পরিবারের মধ্যেও হয়। খুনের ঘটনায় পল্লির বাসিন্দারের মধ্যে কিছুটা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। আমরা সবাই সেটি নিয়ে কাজ করছি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর বলেন, পল্লিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কাজ করছে। মাঝেমধ্যে পল্লির ভেতরে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের আবাসস্থল যেন যৌনপল্লি না হয়, সেদিকে বিবেচনা করে পুলিশ কাজ করছে।
জেলা পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে যৌনকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পল্লির ভেতরে নিরাপত্তার কাজে সব সময় পুলিশ নিয়োজিত থাকে। তা ছাড়া যৌনপল্লিতে মাদকের কেনাবেচা বন্ধের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করি।
তিনি জানান, যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা, সাহায্য-সহযোগিতার জন্য ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি স্যারের নির্দেশনায় উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।
মীর সামসুজ্জামান/এনএ