আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সেই সাংবাদিক
‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফ থানার ওসি’— এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর গুম করে রাখেন ওসি (বর্তমানে সাবেক) প্রদীপ কুমার দাশ। তারপর বিদেশি মদসহ নানা ধারায় তার বিরুদ্ধে করা হয় ছয়টি মামলা।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি নিয়েছেন আদালত। এ সময় তাকে গ্রেফতারের পর কয়েক দিন ধরে নির্যাতন করার বর্ণনা আদালতে উপস্থাপন করেন ফরিদুল মোস্তফা।
জবানবন্দী দেওয়ার পর আদলত চত্বরে সাংবাদিকদের এমনটাই জানান সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা।
ফরিদুল জানান জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, সংবাদ প্রকাশের পর সাবেক ওসি প্রদীপ আমাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। তারপর একটি কক্ষে নিয়ে আমার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে। চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে দেয়। যে কারণে আমি দৃষ্টি হারাতে বসেছিলাম। সেই নির্মম নির্যাতনের পর আমাকে কক্সবাজার শহরের কবিতা চত্বর এলাকায় নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়ার চেষ্টা করে। তা না করে পরে আমাকে বিদেশি মাদক দিয়ে ছয় মামলায় আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/এনএ