নেচে-গেয়ে কারাগারে বর্ষবরণ করলেন কারারক্ষীরা

সারাদেশ যখন বাংলা নতুন বছর উদযাপনে মাতোয়ারা সবাই, তখন এ থেকে বাদ যায়নি নোয়াখালী জেলা কারাগারের কারারক্ষী ও বন্দিরা।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে নেচে-গেয়ে কারাগারে বর্ষবরণ করলেন তারা। এর আগে পান্তা-ইলিশ, রোস্ট-পোলাওয়ে বৈশাখী আনন্দে উপভোগ করে বন্দিরা।
কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখ উপলক্ষ্যে চারদিকে সাজ সাজ রব। যেনো ব্যতিক্রমী বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে নোয়াখালী জেলা কারাগারে। সকালে পান্তা-ইলিশ আর দুপুরে রোস্ট-পোলাও। দীর্ঘ এক যুগ পর উৎসবমুখর পরিবেশে পয়লা বৈশাখ উৎযাপন করেছে নোয়াখালী জেলা কারাগারের ৮৩৩ জন বন্দি।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা কারাগারের ৮৩৩ জন বন্দি ও সব কারারক্ষীদের জন্য সকালে পান্তা-ইলিশের পাশাপাশি দুপুরে পোলাও, মুরগির মাংস ও ডালের ব্যবস্থা করা হয়। বৈশাখের বাঙালিয়ানার আমেজ বন্দিদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মিষ্টি খাবারের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খই কদমা। একই সঙ্গে কারাগারের চার দেওয়ালের ভেতর উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করা হয় প্রীতি ভলিবল ও বন্দিদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে কারারক্ষী ও তাদের পরিবারের জন্য আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কারারক্ষীরা নেচে-গেয়ে কারাগারে বর্ষবরণ করনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার দুপুরে জেলা কারাগারের পয়লা বৈশাখ আয়োজন দেখতে এসেছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ও পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এসময় তারা ঘুরে ঘুরে কারাগারের আয়োজন দেখছেন। তারপর কারাগারে বিভিন্ন কয়েদি ও হাজতিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ ইসমাঈল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াখালী জেলা কারাগার ডেপুটি জেলার সৈয়দ মো. জাবেদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগার সব সময় অবহেলিত জায়গা। বন্দিদের সারাদিন মেইনটেইন করতে গিয়ে নানান সুবিধা অসুবিধার মধ্যে কারারক্ষীরাও অবহেলিত হয়ে যায়। তাই তাদের জন্য আলাদা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। নেচে গেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাতান সবাই। এর মাধ্যমে সবার মনোবল বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জেলার মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারে থাকা সব বন্দি ও হাজতিকে পয়লা বৈশাখের দিন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ উৎযাপনের সূচনা হয়। খেলাধুলার পাশাপাশি কারাগারের ভেতর বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। সবশেষে রাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথকভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
জেল সুপার আ. বারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারা মহাপরিদর্শক স্যারের নির্দেশনায় ব্যতিক্রমী এবারের পয়লা উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্দিদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বৈশাখের আনন্দ আয়োজনের ষোলকলা পূরণ করতে নোয়াখালী জেলা কারাগারে মিষ্টির আয়োজনও বাদ যায়নি। এছাড়া রাখা হয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খই কদমা। বৈশাখ ঘিরে কারাগারের ভেতর বন্দিদের আনন্দ বিনোদন দিতে আয়োজন ছিল খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সর্বশেষ কারারক্ষীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। সবাই খুব ইনজয় করেছে।
কারাগারের ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে বন্দিদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উন্নত খাবারের আয়োজন করা হয়। এই ধরনের আয়োজন বন্দীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনসহ স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
হাসিব/এসএম