পটুয়াখালীতে বিশেষ কৌশলে ওজনে ঠকবাজি, প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা
সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ওজন পরিমাপের জন্য ডিজিটাল ওজন যন্ত্র বা ওয়েট মেশিন খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বিশেষ কৌশলে সেখানেও হচ্ছে ওজনে ঠকবাজি। এতে ক্রেতারা পণ্য ওজনে কম পাচ্ছেন, হচ্ছেন প্রতারিত। বর্তমানে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এমনিতেই ক্রেতার হাঁসফাঁস অবস্থা। তার ওপর ওজনে পণ্য কম পাওয়াটা যেন তাদের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে পটুয়াখালী পৌর নিউ মার্কেটের মুরগী বাজারে গেলে ঢাকা পোস্টের ক্যামেরায় এক অভিনব চুরি পদ্ধতি ধরা পড়ে।
সরেজমিনে তুহিনের মুরগীর দোকানে গেলে দেখা যায়, ডিজিটাল ওজন যন্ত্র বা ওয়েট মেশিনের সঙ্গে বাঁধা আছে একটি গুনা। যেটিকে নিচের দিকে টানলেই চাপ প্রয়োগ হয় মিটারের স্কেলে। আর এর ফলে বেড়ে যায় মুরগীর ওজন। ক্রেতাদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে পারায় বাজার মনিটরিংয়ে আসেন জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ শোয়াইব মিয়া। এ সময় ওজনে কম দেওয়াসহ প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় অভিযুক্ত দোকানিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল মিয়া ও তার দুই ছেলে তুহিন ও অপুর এই বাজারে তিনটি মুরগীর দোকান আছে। তাদের সবগুলো দোকানেই এ ধরনের প্রতারণা চলে। তবে সোমবার ঢাকা পোস্টের ক্যামেরায় তুহিনের দোকানের দোকানের এই প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। তারা সবাই আগে ঢাকায় মুরগীর ব্যাবসা করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে তারা পটুয়াখালী নিউ মার্কেটে ব্যাবসা শুরু করেন।
অভিযুক্ত তুহিনের বড় ভাই অপু বলেন, আমাদের এই বাজারে তিন থেকে চারটি দোকান। সবগুলো তো একসঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব না। এই দোকানটি মোহসীন নামে এক কর্মচারী পরিচালনা করতেন। তিনি যে এভাবে ওজনে কারসাজি করেন সেটি আমরা জানতাম না।
বাজারের আরেক মুরগী ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, ওনাদের এ ধরনের কাজের কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারা দেখা যায় বাজার দামের থেকে সব সময় ১০-২০ টাকা কমে মুরগী বিক্রি করতেন। অথচ প্রতি কেজিতে ১০০-২০০ গ্রাম কম দিয়ে সেটি পুশিয়ে নিতেন। আমরা চাই এ ধরনের অপরাধীদের শাস্তি হোক।
মেহেদী হাসান বাবলু নামে এক ক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে চুরি করছেন তারা। প্রত্যেকটা দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। তারপর তারা যদি এভাবে চুরি করেন তাহলে তো এটা আমাদের পকের কাটার সমান কথা। এমন বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপসহ ডিজিটাল ওজন যন্ত্র বা ওয়েট মেশিনগুলো দোকানের সামনে স্থাপন করার দাবি জানাই।
জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ শোয়াইব মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ নিউ মার্কেটের তুহিনের মুরগীর দোকানে বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল ওজন পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে মুরগী বিক্রি সময় কারচুপির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অপরাধের কারণে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যদি ক্রেতাদের পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ঠেকানোর প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. রায়হান/এফআরএস