কর্তাবাড়ি-সরকার বাড়ির ৫৬ বছরের দ্বন্দ্বে আবারও প্রাণহানি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ৫৬ বছর ধরে চলে আসছে দুই বংশে শত্রুতা। উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যানের সরকারবাড়ি ও সাবেক চেয়ারম্যানের কর্তাবাড়ির মধ্যে চলে আসা এই দ্বন্দ্ব এ পর্যন্ত ১৫টি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
গতকালও এ সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। এতে কাইয়ূম মিয়া নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই দুই বংশের মধ্যে ৫৬ বছর ধরে চলছে দ্বন্দ্ব। সরকারবাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ আর কর্তাবাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন।
গত ঈদের পরদিন তোফাজ্জল হকের গোষ্ঠীর নাদিম কর্তা, সরকার বাড়ির লোকজনের হাতে খুন হন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার জেরে ১৩ সেপ্টেম্বর কর্তা বাড়ির লোকজনের হাতে সরকার বাড়ির ইকবাল খুন হন বলে জানা যায়। দুটি খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। কর্তা বাড়ির নাদিম হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এসব ঘটনার জেরে গতকাল দুপক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ জড়ায়। বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই কাইয়ূম মিয়া নামে একজন নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন।
এ বিষয়ে সরকার বাড়ির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, কর্তা বাড়ির নাদিম মারা গেলে আমাদের কমপক্ষে ২০০ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন লাগানো হয়। প্রায় ৫২ বছর যাবত তোফাজ্জল হক তার বংশের লোকজন নিয়ে আমাদের অত্যাচার নির্যাতন করছে, আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আজও আমার বংশের কাইয়ূমকে তারা হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন
অপরদিকে প্রতিপক্ষের কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন,আমার বংশের লোকজন দীর্ঘদিন পলাতক থেকে বাড়িতে গেলে সরকার বাড়ির লোকজন তাদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আমরা অত্যাচার নির্যাতন করি না। বরং সরকার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আছি। তারা এ পর্যন্ত আমার বংশের ৪ জনকে খুন করেছে। আমরা সবসময় নির্যাতনের শিকার।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এনেছে। বড় দুই বংশের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। তাদের এসব ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/এনএফ