মাদরাসা শিক্ষকের পিটুনিতে ১৯ দিন ধরে শিক্ষার্থী হাসপাতালে
সাভারে এক মাদরাসা শিক্ষকের পিটুনিতে মোহাম্মদ ঈশান (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী ১৯ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ঈশান ও তার বোন আফসানা আক্তার ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে মারধরের বিষয়টি জানান।
এর আগে, গত ৬ অক্টোবর সাভারের আমিন বাজার ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া এলাকার জামি’আ মদীনাতুল উলুম ও মদীনাতুল উলুম গোরাবা এতিমখানায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত ঈশানের বোন আফসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার ভাই ৫ বছর ধরে ওই মাদরাসায় পড়াশোনা করে। গত ৪ বছর সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ বছর প্রায়ই বিভিন্ন কারণে ঈশানকে মোহাম্মদ হোসাইন নামে এক শিক্ষক মারধর করেন। পড়াশুনার জন্য পিটুনিতে আমরা আগে কখনো কিছু বলিনি। কিন্তু এই মাসে (অক্টোবর) ঈশানকে শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেইন বেত দিয়ে হাতে ও পায়ে বেধরক মারেন। এতে আমার ভাইয়ের পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে যায়। হঠাৎ মারধরের কারণে অসুস্থ হওয়ায় তাকে ১৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।’
ইশানের বড় ভাই ইসমাইল বলেন, ৬ অক্টোবর মাদরাসার ওই শিক্ষক ইশানকে বেত দিয়ে মারধর করেন। পরে সেই আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হঠাৎ ফুলে যায়। পরে আমি ১১ অক্টোবর ইশানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে সেই দিনই বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর টেকনিক্যাল ডায়াবেটিস হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসারত থাকার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ইশানের চিকিৎসা চলছে। ঈশানের পায়ে আঘাতের ফলে পায়ের মাংসের কিছু জায়গা পচে গেছে বলেও জানান তিনি।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২২ অক্টোবর ইশান নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী পায়ে পচন নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। মূলত পায়ে আঘাতের কারণে রক্তের জমাট থেকে সেখানে পচন ধরেছে।
আরও পড়ুন
অভিযুক্ত শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ হোসেইন মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রদের ভয় দেখানোর জন্য মধ্যম গতিতে হালকাভাবে হাতে দুইটি করে প্রহার করা হয়েছিল। সে সময় ঈশান নামে একজন ছাত্র ছিল, তাকেও দুই হাতে দুইটি করে প্রহার করা হয়েছে। কিন্তু তার পায়ে আঘাত করা হয়নি।’
মাদরাসার শিক্ষাসচিব আব্দুর রহিম কাশেমী জানান, ঈশানের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে চার সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটিতে মারধরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষক ঈশানের হাতে বেতের আঘাত করেছিলেন। এরপরে ঈশান মাদরাসার দেওয়াল টপকে বাসায় চলে যায়। সে সময় তিনি দেওয়াল থেকে পড়ে আঘাত পেতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আশিক ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোটন আচার্য্য/এফআরএস