সহসাই হচ্ছে না চাঁদপুর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস
নানা অনিয়ম ও অভিযোগের কারণে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হয়ে গেছে। দীর্ঘ কয়েক মাস আগে এটি বাতিল হলেও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির চাপে তা গোপন করা হয়। ফলে সহসাই আর হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। এদিকে জোর করে দখলকৃত সেই ভূমি ফেরত চাচ্ছেন জমির মালিকরা। আর দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি শিক্ষার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে দীপু মনি ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান ‘বালুখেকো’ সেলিম খান (গত ৫ আগস্ট গণপিটুনিতে নিহত) জোরপূর্বক অনেক পরিবারকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এ ছাড়া জমির বাজার দরের চাইতে কম দাম দেওয়া হয়েছে তাদের। এই বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে প্রশাসন।
স্থানীয়রা বলেন, সেলিম চেয়ারম্যান দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে জমি থেকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু এখন তো আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো না। আমরা এখন জমি ফেরত চাই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিন বিভাগের দুই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০ জন।
ভুক্তভোগী জমির মালিক কালু খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে আমার কাছ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক নিয়ে গেছে সেলিম খান। আমি দিতে রাজি হইনি। তার লোকজন দিয়ে আমাকে ধরে এনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেয়। দাম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা, দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। আমি আমার জমি ফেরত চাই।
এদিকে চাঁদপুর শহরের ওয়াবদাগেট খলিশাডুলি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহাল বলেন, দুর্নীতির কারণে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থাসহ জমি বরাদ্দ দেওয়া হোক। সব জায়গায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে অথচ ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির কারণে আমরা এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আছি। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আহ্বান জানাব যাতে জেলা শহরের মধ্যে খুব ভালো একটি স্থানে আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিন্স মাহমুদ বলেন, আমাদের নিজস্ব ভবন না থাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে নানা সমস্যা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আবাসিক হল, খেলাধুলার মাঠ নেই। নিজস্ব আবাসিক হল না থাকায় মেয়েদের বেশি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস করা হোক।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমি চাঁদপুরে যোগদানের আগেই অধিগ্রহণ প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আগে যে স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। ওই জায়গায় আর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাজ করব।
প্রসঙ্গত, অনিয়ম ও অভিযোগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়। তবে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির চাপে তা এতদিন গোপন ছিল।
আনোয়ারুল হক/এমজেইউ