মসলার সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে একাধিক বাড়িতে চুরি, গ্রেপ্তার ৪
রাজবাড়ীতে রান্নাঘরে রাখা খাবারের মসলা বা লবণের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির সবাইকে অজ্ঞান করে চুরির ঘটনায় এক মাস পর চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।
রোববার (১৪ জুলাই) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.
ইফতেখারুজ্জামান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার কানাইপুর ইউনিয়নের উলোকান্দা গ্রামের মৃত আলীমুদ্দিন শেখের ছেলে কামাল শেখ (৪৫), একই ইউনিয়নের ভাটি কানাইপুর গ্রামের মৃত রইচ মন্ডলের ছেলে রুবেল মন্ডল (৩৫), রাজবাড়ী সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে অনিক ওরফে বিল্লাল মুন্সী (২৭) ও ফরিদপুরেট কোতোয়ালি থানার গোপালপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মৃত পরশ উল্লাহ মল্লিকের ছেলে লালন মল্লিক (৪৮)।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, গত ৭ জুন রাত ৮টা থেকে ৮ জুন সকাল ৬টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা চোরেরা রাজবাড়ী সদর থানার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামের আমরিুল ইসলামের বাড়ির সকলকে খাবারের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ঘুমে অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
পরে তদন্তকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু আসামি রাজবাড়ী সদর থানার বিনোদপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করছে। এমন সংবাদ প্রাপ্তিতে রাজবাড়ী সদর থানার একটি টিম বিনোদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ১৩ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আসামি কামাল শেখ ও রুবেলকে আটক করে। এ সময় কামাল শেখের ভাড়া ঘরে তল্লাশী করে দুইটি লোহার রড, ১টি লোহার প্লাস এবং ১ টি স্যালাই রেঞ্চ উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমতে একই থানার চরলক্ষীপুর এলাকায় অভিযান করে অনিক ওরফে বিল্লাল মুন্সী আটক করা হয়। এ সময় তার ভাড়া ঘর তল্লাশী করে চেতনানাশক ওষুধ নরটিন, ডিসোপ্যান-২, পেইস-২, লেপটিক-২, ছোট বড় প্লাস্টিকের কৌটার মধ্যে চেতনানাশক ওষুধের গুড়া এছাড়া পলিথিনের মধ্যে হলুদ রংয়ের চেতনানাশক ওষুধের গুড়া উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য মতে, রাজবাড়ী থানার আলাদিপুর এলাকায় অভিযান করে লালন মল্লিককে আটক করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জানায় যে, তারা দিনে ও রাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করত। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির রান্নাঘর বাইরে উঠানে হয়ে থাকে। চোর চক্রটি দিনে অথবা রাতের যেকোনো সময় সুযোগ বুঝে রান্নাঘরে ঢুকে মসলার সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে রাখতো। যেদিন সকালে মিশিয়ে রাখত সেদিন রাতে বাড়ির লোকজন ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লে ওই বাড়িতে চুরি করতো। চুরি করার সময় বাড়ির লোক জেগে উঠলে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রের ভয় দেখানো হয়।
তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি রাজবাড়ী সদর থানা এলাকাসহ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে সংঘবদ্ধভাবে চুরি, ডাকাতি এবং গরু চুরি করে আসছে বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ চক্রে জড়িত অন্যান্য আসামি গ্রেপ্তারেও রাজবাড়ী থানা পুলিশ তৎপর আছে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে