মাতাল এলজিইডির কার্যসহকারী, দিনদুপুরে নারীদের কাছে জানতে চান বয়স
পটুয়াখালীতে মাতাল অবস্থায় এক পথচারী নারীকে হেনস্তা ও অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে মির্জাগঞ্জ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কার্যসহকারী মো. রেজাউল হক কিরনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) অভিযুক্ত রেজাউল হককে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলমগীর বাদশাহ। এর আগে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার (৩০ জুন) বিকেলে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বরগুনা থেকে বরিশাল যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী নারী তহুরন নেছা তমা। মাঝপথে বৃষ্টি নামলে চৈতামোড় এলাকায় আবুল বাসার মিয়ার চায়ের দোকানে অবস্থান নেন তারা। মদ্যপান অবস্থায় হঠাৎ দোকানে উপস্থিত হন রেজাউল হক কিরন। দোকানে এসেই ওই নারীকে তিনি নানা ধরনের অবান্তর প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ভুক্তভোগী নারী কোনো উত্তর না দিলে তিনি ক্ষেপে দিয়ে গালমন্দ করতে শুরু করেন এবং একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন।
এ ঘটনায় চা দোকানদার আবুল বাসারের স্ত্রী শিমু বেগম বলেন, ‘কিরন ভাই মাঝেমধ্যেই দোকানে এসে এমন করে, খাবার খাইয়া টাকা পর্যন্ত দেন না। টাকা চাইলে উল্টাপাল্টা কথা কইয়া গালি দেয়। কিন্তু রোববার ওই আপার সঙ্গে একটু অতিরিক্ত করেছে। শুধু শুধু আপাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। আপা থামতে বললে সে তার গায়ে হাত তোলার উদ্দেশ্যে তেড়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শী চৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাখাওয়াত কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমি দৌড়ে গিয়ে ওই চায়ের দোকানে ঢুকি। গিয়ে দেখি কিরন ভাই ওই ভদ্রমহিলাকে গালমন্দ করছেন। আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, তাই আমি ওই ভদ্র মহিলাকে বললাম, আপা সে হয়ত বেসামাল অবস্থায় রয়েছে আপনি এখান থেকে চলে যান।’
আরও পড়ুন
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী তহুরন নেছা বলেন, ‘তিনি এসেই আমাকে নানা ধরনের অবান্তর প্রশ্ন করতে ছিলেন। যেমন- আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার বয়স কত, আমি একা যাচ্ছি কি না ইত্যাদি। আমি এসব প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করেন। আমি তাকে এমন অশোভন আচরণ করতে নিষেধ করলে তিনি আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন এসে তাকে বাধা দেন এবং আমাকে ওখান থেকে সরিয়ে আনে। তার আচরণে একজন নারী হিসেবে আমি বিব্রত। এ ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কার্যসহকারী মো. রেজাউল হক কিরনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কার্যসহকারী মো. রেজাউল হক কিরন এর আগে বেতাগী উপজেলা(এলজিইডি) কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। নারী সংশ্লিষ্ট ঘটনার কারণে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সেখান থেকে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা (এলজিইডি) কার্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আলমগীর বাদশাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাকে ইতোমধ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মেহেদী হাসান/এমজে