শখে শুরু, এখন বিশ্ববাজারের হাতছানি
ঠাকুরগাঁওয়ে সমতল জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষ করা হচ্ছে। জৈব পদ্ধতিতে আগর গাছের নির্যাস সংগ্রহ করে সফলতা পেয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের রজিনা আক্তার। জেলায় তিনিই প্রথম সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষ করছেন।
২০১০ সালে শখের বশে সিলেট থেকে শতাধিক আগরের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে পরীক্ষামূলকভাবে আগরবাগান গড়ে তোলেন রজিনার স্বামী শরিফ। এখন তার বাগানে ৪ শতাধিক আগরগাছ রয়েছে। আগর চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি আগর গাছের চারা উৎপাদনও করছেন।
সাধারণত আগরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে লোহার পেরেক মেরে ও ড্রিল করে ক্ষত তৈরি করে রাসায়নিক কীট ঢুকানো হয়। এতে ওই স্থানে ছত্রাক তৈরি হয়; যা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
রজিনার দাবি, এ পদ্ধতিতে আগরের মান ঠিক থাকে না। রসে আয়রন ও রাসায়নিক মিশ্রণ পাওয়া যায়। তাই তিনি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছত্রাক তৈরি করেন। এরপর ওই ছত্রাক বাঁশের কাঠির মাধ্যমে কম ছিদ্র করে আগর গাছের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। পরে এ ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি যত হয়, ততই আগরের নির্যাস পাওয়া যায়।
রজিনা আরও বলেন, অন্য গাছের তুলনায় আগর গাছের বাগান করা সহজ। খরচ তুলনামূলক কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। আগর গাছের নির্যাস থেকে মূল্যবান সুগন্ধি ও তেল পাওয়া যায়। যা থেকে আতর, আগরবাতি, বডি স্প্রেসহ বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পণ্য তৈরি করা হয়। বর্তমান বাজারে এক কেজি আগর আতরের দাম ৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। আগর গাছের কাঠ ওষুধ কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। উত্তরবঙ্গে আমরাই প্রথম আগর গাছ থেকে আগর অয়েল উৎপাদন শুরু করেছি।‘ইউ এন্ড ডিপি’র সহযোগিতায় আগর তেল উৎপাদন করার জন্য মেশিন কেনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি আমরা এই তেল রপ্তানি করতে পারি তাহলে উত্তরবঙ্গে নতুন এক অর্থনীতির সম্ভাবনা তৈরি হবে।
ঠাকুরগাঁও ছাড়াও দিনাজপুর, পঞ্চগড়েও আগরের চাষে হচ্ছে, কিন্তু আগর গাছ থেকে তেল উৎপাদনের যে মেশিন সেটি না থাকার ফলেই সেই মূল্যবান গাছ কোনো কাজে আসছে না। আমাদের এই মেশিনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আমরা আগর গাছ থেকে আগর তেল উৎপাদন করেছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাইরের দেশে এ তেল রপ্তানি করতে পারবো বলে আশাবাদী। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমরা খুব সহজেই নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তার পাশাপাশি আমাদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর আতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় আগর চাষ করে বদলে যেতে পারে এ জেলার মানুষের ভাগ্য। আগর চাষে আগ্রহীদের সকল ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
আরিফ হাসান/এনএফ