‘আজ মা দিবসেও ছেলেমেয়ে একবারের জন্য ফোন দিয়ে খোঁজ নিল না’
হাসনা বেগমের স্বামী মারা গেছে প্রায় ১২ বছর আগে। মৃত্যুর আগে অর্থ সম্পদ কিছুই রেখে যাননি তার স্বামী। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তার। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের বড় করিয়েছেন। এখন তার ছেলেমেয়ে কেউই আর খোঁজ নেয় না।
তাই রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকানে চা বিক্রি করে চলছে হাসনা বেগমের জীবন। ২০ বছর ধরে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
হাসনা বেগমের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার চাকদহ সরদার বাড়ি এলাকায়। তার স্বামী সুলতান মিয়া প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে মেলান্দহ পৌর শহরের সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে ছোট্ট একটি দোকানে চা বিক্রি করেন তিনি।
রোববার (১২ মে) বেলা ১১টার দিকে চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সিএনজি স্ট্যান্ডের পাশেই রাস্তার ফুটপাতে চা বিক্রি করছেন হাসনা বেগম। তার দোকানের চা খাচ্ছেন অটোরিকশাচালকেরা। সকাল থেকে দোকান চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ছেলেমেয়ে কেউ খোঁজ খবর না নেওয়াই বাড়িতে রান্নাবান্নাও করেন না তিনি। ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে খান। তার তিন মেয়ে বড় এবং ছেলে সবার ছোট।
কেমন চলছে হাসনা বেগমের জীবন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব কষ্টেই চলছে জীবন। ছেলে-মেয়ে থাকলেও কেউ এখন আর খোঁজ-খবর নেয় না। চা বিক্রি করেই চলছে জীবন। শেষ পর্যন্ত মনে হয় এটাই করতে হবে। তবে চিন্তায় থাকি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, আমাকে দেখবে কে? আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেকে কষ্ট করে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছি। আর মেয়েদেরকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। মেয়েরা এখন তাদের বাড়িতে থাকে। আর ছেলে এখন খোঁজ খবর নেয় না। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। খুব কষ্ট করে ছেলেমেয়েদেরকে বড় করছি অথচ আজ মা দিবসেও কেউ আমাকে একবারের জন্য ফোন দিয়ে খোঁজ নিল না। জিজ্ঞেস করেনি, আমি কেমন আছি। কেউ পাশে নেই আমার। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই চা বিক্রি করি।
হাসনা বেগম আরও বলেন, বর্তমানে আমার বাড়িতে কোনো কিছুই নেই। বাড়িতে রান্না করার মতো কিছু নেই। চা বিক্রি করে যে কয় টাকা পাই তা দিয়ে হোটেলে ভাত কিনে খেয়ে জীবন চলে।
অটোরিকশাচালক ফজলুল বলেন, হাসনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় চা-পান বিক্রি করেন। এটি বিক্রি করেই তার জীবন চলছে। ছেলেমেয়ে থেকেও না থাকার মতো। কেউ খোঁজখবর রাখে না। বাড়িতে রান্নাবান্না করে না পাশেই ভাতের দোকান থেকে দুই বেলা ভাত খেয়ে জীবন চলছে তার।
জয়নাল আবেদিন নামে আরেক চালক বলেন, জীবন তার খুব কষ্টে কাটছে। তিনি অসুস্থ হলে কী করবে তাকে কে দেখবে?- এ নিয়ে তিনি এখন বেশি চিন্তিত। তার একটি ছেলে রয়েছে, সে খোঁজখবর নেয় না। মেয়েরাও একই অবস্থা।
মেলান্দহ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, সমাজে যারা পিছিয়ে রয়েছে, সেসব নারীদের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়। ওই নারী বিধবা ভাতার আওতায় রয়েছে কিনা সেটা দেখতে হবে, না থাকলে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।
রকিব হাসান/আরকে