বনের গাছ কেটে নিচ্ছেন কর্মকর্তারা, বাধা দিলে মামলার হুমকি
মৌলভীবাজারের সাতগাঁও বন বিটের কোটি টাকা মূল্যের গাছ দিনে-দুপুরে কেটে নেওয়া হচ্ছে। খোদ বন বিভাগের কর্মকর্তারাই এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ রকম গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। কেউ বাধা দিলে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার তীরঘেঁষে অবস্থিত সাতগাঁও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় ৪০ হেক্টর উঁচু-নিচু টিলা আর পাহাড়ে ঘেরা এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ওষুধি গাছ। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় এসব গাছ রোপণ করা হয়েছে। গাছের সবগুলোতেই বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে নম্বর দেওয়া। গত কয়েক বছর ধরে এই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যার কারণে পড়ে আছে শত শত গাছের গুঁড়ি ও ডালপালা। এসব গাছের মূল্য বর্তমান বাজারে প্রায় কোটি টাকা।
জানা যায়, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে সামাজিক বনায়নের জন্য স্থানীয় উপকারভোগীদের নিয়ে এই বাগান গড়ে তোলা হয়। সাতগাঁও বন বিটের আওতায় এই বাগানে দ্রুত বর্ধনশীল আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু এসব গাছ বড় হতে না হতেই নজর পড়ে যায় খোদ বন কর্মকর্তাদের। দিনে-দুপুরে এসব গাছ বন বিভাগের বিট কর্মকর্তারা কেটে নিয়ে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সাতগাঁও বন বিটের এলাকায় বসবাস করা বাগানের উপকারভোগী শাহজাহান মিয়া বলেন, ২০০৭ সালে শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে আমরা এই বাগানের উপকারভোগী হই। এই গাছগুলো রোপণ করার পর এখন বড় হয়েছে। কিছু দিন আগে নিলাম হয়। নিলাম হওয়ার পর সাতগাঁও বিট অফিসার ও শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার অবাধে গাছগুলো কেটে বিক্রি করছেন। এখন গাছগুলো নিলাম হয়েছে, টাকা পাওয়ার সময়। এখন তারা গাছগুলো প্রকাশ্যে কেটে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাধা দিলে গাছ চুরির মামলা দিয়ে দেয়।
বনের পার্শ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া বলেন, আমি এখানে গরু চড়াতে আসি। প্রায়ই দেখি বনের কর্মকর্তারা গাছ কাটেন। গাছ কেটে তারা নিয়ে যান। অনেক সময় বড় বড় গাড়ি দিয়েও গাছ নিয়ে যান। বাধা দিলে মামলা দিয়ে দেন।
পথচারি মুজাহিদ বলেন, আমার লেবু বাগানে যাওয়া আসার সময় সাতগাঁও বিটের রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। প্রায়ই দেখি বনের লোকেরা গাছ কাটতেছে। তারা গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতগাঁও বন বিটের এই সামজিক বনায়নটি গত ১২ ফেব্রুয়ারি নিলামের টেন্ডার হয়। এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এই বাগানে মোট গাছের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৪৪টি। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ। ৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে ২০০৫-২০০৬ সালে এই বনায়ন করা হয়। স্থানীয় উপকারভোগী ৪০ জনকে নিয়ে এই বনায়ন গড়ে তোলা হয়।
এ বিষয়ে বন বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জের ফরেস্ট রেঞ্জার মো. মজনু প্রাং বলেন, বনের গাছ কাটা হলে এই দায় শুধু বিট অফিসারের নয়, এই দায় উপকারভোগীরাও এড়াতে পারেন না। চুক্তি অনুযায়ী তাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আর মামলা দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। বরং তাদের হাতেনাতে ধরেই মামলা দেওয়া হয়।
ওমর ফারুক নাঈম/আরএআর