ভোক্তা অধিকার পরিচয়ে চাঁদা দাবি, দুই সাংবাদিককে গণধোলাই দিল জনতা
নোয়াখালীর কবিরহাটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করায় ২ সাংবাদিককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। সোমবার (৯ অক্টোবর) রাতে উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রাম বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদের কাছ থেকে পুলিশ একটি ভুয়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার পরিচয়পত্রসহ চারটি পরিচয়পত্র উদ্ধার করেন।
অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক হলেন- নোয়াখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সোনাগাজীর মফিজ উল্যার ছেলে গোলাম মোস্তফা বুলবুল (৪৪) ও বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার হাজীপুর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম সোহাগ (৩৮)। বুলবুল দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির নোয়াখালী প্রতিনিধি ও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সদস্য এবং সোহাগ দৈনিক বিজয় বাংলাদেশের নোয়াখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর বুলবুল ও রিয়াজুল কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রাম বাজারে যায়। বাজারের রফিক উল্যার দোকানে গিয়ে রিয়াজুল ইসলাম নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বুলবুল তার সহকারী বলে পরিচয় দেয়। পরে তারা ওই দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে গিয়ে মালামালের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বলে প্রতি দোকান থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করে। এ সময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে এবং কর্মকর্তার আইডিকার্ড দেখতে চায়। তারা কার্ড দেখাতে ব্যর্থ হলে লোকজন তাদের গণপিটুনি দিয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের থানায় নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শহীদ ডিলার বলেন, আমার দোকানে এসে তারা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সারের দাম জানতে চায়। আমি তখন দোকানে ছিলাম না। আমার ছেলেকে তারা একজন ম্যাজিস্ট্রেট আরেকজন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। আমি আসার পর তারা বলে এসেছি সার মনিটরিং করার জন্য। আপনি সার কত টাকা দামে বিক্রি করেন। আপনার এখানে ভুল আছে আপনাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে পরিচয়পত্র দেখতে চাই। পরে তারা পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হন।
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জু বলেন, বিষয়টি জেনেছি। প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য বা এর বাইরে কোনো সাংবাদিক যদি সাধারণ জনগণকে হয়রানি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউসার মিঞা বলেন, আমাদের দপ্তরের কর্মকর্তার পরিচয়দানকারী এ প্রতারকদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
হাসিব আল আমিন/এএএ