এক মঞ্চে ঐক্যের ডাক দিলেন দেশের প্রধান ছাত্র সংগঠনের নেতারা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে এবং দেশকে স্থিতিশীল রাখতে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশের প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোতে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ অনুষ্ঠানে তারা এমন ঘোষণা দিয়েছেন।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জাস্টিস ফর জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সদস্য সচিব মীর ছিবগাতুল্লাহ তকি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল বাশার আজিজীসহ অন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ক্যাম্পাস নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
এসময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মত পার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ দেশের অখণ্ডতা, বিদেশি আগ্রাসন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস চলবে না। সামনের পথ অতিক্রমের জন্য আমাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের আর কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। এবার যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে বাংলাদেশ আর কোনো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, অনেকেই এখনো প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। সে অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত। এসব বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে। যদি কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সেখানে ছাত্রদের যেতে হচ্ছে। ছাত্রদলের দ্বারা সামান্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রদল অনেক বিসর্জন দিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের ভুলে যাবেন না। বিশ্বজিৎকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশে বিশ্বজিৎ, সাজিদকে মনে রাখবে।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতির অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা। যারা করবে না তাদের ছাত্ররা গ্রহণ করবে না। ছাত্রলীগের মতো কেউ আচরণ করলে তাদের পরিণতিও খারাপই হবে। আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। বর্তমান বড় সংকট হলো শিক্ষায়। শিক্ষার যদি সংস্কার না হয়, তাহলে বারবার দিল্লির দাসত্ব করতে হবে। এ দেশের জনগণ এবার দিল্লির আধিপত্য রুখে দাঁড়িয়েছে, আগামীতেও করবে। এজন্য দিল্লির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্রদের সংকট কীভাবে সমাধান হবে, যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হয়। এজন্য ছাত্র নির্বাচন করতে হবে। এখন সময় এসেছে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করার। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান প্রয়োজন।
ছাত্র অধিকার পরিষদ সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আপনারা কাজ করেন। আমরা সঙ্গে আছি। দরকার হলে আপনাদের জন্য আমরা আবার জীবন দেব। আবার রক্ত দেব। এখন আমাদের ঐক্যের দিকে এগোতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে রাখবেন না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ভারতীয় মিডিয়া নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছে। তার নিন্দা জানাই। আমরা ভারতের দাসত্ব করার জন্য লড়াই করিনি। আমরা ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিকতার জন্য লড়াই করেছি। মওলানা ভাসানীর ‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগান আমরা দিচ্ছি। তার আদর্শের ভিত্তিতে আমরা ঐক্যে আসতে পারি।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জবি শিক্ষার্থী শহীদ একরামুল হক সাজিদদের বোন ফারজানা হকও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমার মা এখনো সাজিদের কাপড় বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমি আমার ভাই হারিয়েছি। আমার মতো অনেকেই তাদের পরিবারের মানুষকে হারিয়েছে। এই স্বাধীনতা যেন বৃথা না যায়। সবাইকে একতা ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরএইচটি/এসএসএইচ