ভিড় বেড়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে, আন্তর্জাতিক ৬০ ভাগ স্বাভাবিক
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় স্থবির হয়ে পড়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল। এরপর জুন মাস থেকে ধীরে ধীরে ফ্লাইট চালু হলেও এ বছরের এপ্রিল থেকে ফের হানা দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বন্ধ হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। তবে ১৫ জুলাই থেকে আবারো খুলতে শুরু করে ফ্লাইটগুলো। প্রথমদিকে সীমিতভাবে ফ্লাইট চালু হলেও বর্তমানে পুরোদমে চলছে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে ২০২০ সালে স্বাভাবিক সময়ে বিমানবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ারের ১১০ থেকে ১১৫টি ফ্লাইট চলত। এখন দৈনিক ফ্লাইট চলাচল আগের মতোই। অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচলে তেমন কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় যাত্রী সংখ্যাও ভালো। আগে দৈনিক ১১০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উঠানামা করত, বর্তমানে সেই সংখ্যা গড়ে ৬৫ থেকে ৭২টি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে যেভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো, এখনো তেমন স্বাভাবিকভাবেই ফ্লাইট চলছে। বর্তমানে আকাশপথে যাত্রীদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে অনেকেই আকাশপথকেই বেছে নিচ্ছেন। ইউএস-বাংলা দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটেই ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কক্সবাজার, সৈয়দপুর, যশোর রুটের ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী বেশি পাচ্ছি আমরা। এসব ফ্লাইটে প্রায় ৮০ ভাগ যাত্রী ভরে যাচ্ছে। যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ফ্লাইট সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
অভ্যন্তরীণ আকাশপথে যাত্রী বাড়ার কথা নিশ্চিত করেছে বিমান বাংলাদেশ এবং নভোএয়ারও।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল আগের মতোই স্বাভাবিক হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আগের মতোই যাত্রীদের চলাচলে মুখরিত হচ্ছে। যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দেশের ভ্রমণ বিধিনিষেধ মেনে বিমানবন্দর দিয়ে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিরতির পর ফ্লাইট চলাচলের প্রথমদিকেই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে টার্কিশ এয়ারলাইন্স। প্রাথমিকভাবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সপ্তাহে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও যাত্রীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্তমানে তারা ১২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়াও এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়াসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। এই এয়ারলাইন্সগুলোতে প্রধানত বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যান। এসব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তারা ইউরোপ-আমেরিকার প্রচুর যাত্রী পাচ্ছে। প্রবাসীদের পাশাপাশি অনেক পর্যটকও যাচ্ছেন ফ্লাইটে।
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে সপ্তাহে ১২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইট চালুর প্রথম দিন থেকেই আমরা যাত্রীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। প্রথমদিকে যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও বর্তমানে তারা পূর্ণ আস্থার সঙ্গে আকাশপথে চলাচল করছেন। তুরস্ক ছাড়াও টার্কিশ এয়ার কানেক্টিং ফ্লাইটের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে যাত্রী বহন করে।
এদিকে অন্যান্য রুটে যাত্রী থাকলেও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনবান্ধব রুটে যাত্রী কম দেখা গেছে। ট্যুর অপারেটররা জানান, এই তিনটি দেশ সম্প্রতি তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তবে এয়ারলাইন্সগুলো এখনো পুরোদমে ফ্লাইট চালু করেনি। তাই যাত্রী কম।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২১ সালের ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে চীন বাদে সব দেশের সঙ্গে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ৭ মে, ১৬ মে, ৩০ মে এবং ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১৬ জুন থেকে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে লন্ডন এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য দেশের ফ্লাইটগুলো চালু করা হয়। তবে ২০২১ সালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এপ্রিল মাসে কিছুদিনের জন্য আবারো ফ্লাইট বন্ধ ছিল।
এআর/এইচকে