শোক পালনে চাপ, আন্দোলনবিরোধী কথায় বেবিচকে বাকবিতণ্ডা, উত্তেজনা
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আলোচিত নাম রাশিদা সুলতানা। তিনি বেবিচক সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক (এভসেক ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন) হিসেবে কর্মরত আছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন এই কর্মকর্তা। তবে হঠাৎ ১৪ আগস্ট অফিসে আসেন। বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনে চাপ দেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ আবারও দেশ শাসন করবে বলে বক্তব্য দেন।
রাশিদার এমন বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বেবিচক, ঘটে কর্মচারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা। এসময় কর্মচারীরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন, তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দেন। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেবিচক ত্যাগ করেন রাশিদা।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) তাকে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে বদলি করা হয়।
সেদিনের (১৪ আগস্ট) ঘটনায় বেবিচক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি রাশিদার অপরাধ চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ওই তদন্ত কমিটির সভাপতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক (এভসেক) উইং কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– এভসেক সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (ট্রেনিং) শারমিন খানম এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক (সিএনএস) দেবব্রত বর্মা।
আরও পড়ুন
কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে রাশেদাকে স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মুখে সরকারবিরোধী কথা, অফিসে অনুপস্থিত থাকা ও অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করায় রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, রাশেদা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিগত বছরগুলোতে বেবিচকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও হেয়প্রতিপন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ও বেবিচকের সবাইকে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার নির্দেশনা মেনে চলতে বলার সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘রাশিদা সুলতানা তার অফিসের সামনে বেবিচক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং এর দরুন স্বল্প সময়ের জন্য অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়।’
ঘটনার তদন্তে এভসেকের দুইজন সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা, দুইজন এভসেকের নিরাপত্তা প্রহরী, এভসেকের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন অফিস সহকারী, একজন ক্লিনার ও একজন রক্ষণাবেক্ষণকর্মীর জবানবন্দি নেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন নিরাপত্তাকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৪ আগস্ট রাশিদা অফিসে এসে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এলে আমি সবাইকে দেখে নেব। একপর্যায়ে আমি তাকে সরকারবিরোধী মন্তব্য না করার অনুরোধ করি। তখন তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে কর্মচারীদের চাপের মুখে তিনি অফিস ছাড়তে বাধ্য হন।
রাশেদার দুর্নীতি প্রমাণ হয়েছিল আগেই, ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
২০২৩ সালে রাশিদার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তদন্ত কমিটিতে ছিলেন বেবিচকের সদস্য (এটিএম) এয়ার কমডোর এ কে এম জিয়াউল হক। সেই প্রতিবেদনও ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিদা এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে দাপ্তরিক গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। বেবিচকের আদেশ অমান্য করে তিনি রাজধানীর কাওলা এলাকার সংস্থার দুটি বাসা একাই দখল করে রেখেছেন। রাশিদা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও সহকারী পরিচালক (এটিএম) সুপ্লব কুমার ঘোষকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকি দিয়েছেন। তাকে চাপ দিয়ে আম, লিচু, চালসহ নানা কিছু চেয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনে একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার কথাও উঠে আসে। প্রতিবেদনে সোনা চোরাচালানকারীদের সহযোগিতা, নিরাপত্তা পাসের ফাইল আটকে ঘুষ নেওয়া, বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন সরবরাহকারী একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বিজনেস ক্লাসের উড়োজাহাজ টিকিট নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
এআর/এসএসএইচ