অর্জন অনেক, স্বপ্ন আরও এগিয়ে যাওয়ার
বহু বছরের বঞ্চনা, জনম জনমের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার দূত শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তির সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে একটি জাতির। রক্তবন্যা পেরিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হওয়া শাপমুক্তি পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিপাগল বাঙালিকে থামানো যায়নি, অমঙ্গলের বিষদাঁত ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন সূর্য হাতে, ছড়িয়েছে নতুন আলো বিশ্বভুবনে। জীবনমান, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ বহু খাতে পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশীদের। ঢাকা পোস্টের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পগাথায় আজ থাকছে এভিয়েশন খাতের সার্বিক চিত্র…
বাংলাদেশ বিমানসহ দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ব্যবহার করছে। বিমানবন্দরগুলোতে এসেছে আমূল পরিবর্তন, পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সবমিলিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে ধাপে ধাপে আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত। আমাদের আরও কিছু স্বপ্ন ও কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এভিয়েশন খাতের অর্জন নিয়ে এমন মন্তব্য করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন দেশের উন্নয়ন করেছেন। এ খাতেরও উন্নয়ন করেছেন। এরপর সেই দায়িত্ব পেয়েছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশপ্রেম ও অক্লান্ত পরিশ্রম দেশের সব খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। তার সঠিক দিকনির্দেশনায় এভিয়েশন খাতেও আমূল পরিবর্তন এসেছে।
টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দিকটি হচ্ছে এর অত্যাধুনিক ভবন। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এ ভবনের ভেতরে থাকছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুনে অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রীরা
মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভিয়েশন খাতে কিছু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তার নির্দেশনায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে নির্মাণকাজ। যেখানে টার্মিনালের ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা সেখানে ইতোমধ্যে ১৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) থাকছে। তবে, টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দিকটি হচ্ছে এর অত্যাধুনিক ভবন। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এ ভবনের ভেতরে থাকছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুনে অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রীরা।
দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এভিয়েশন খাতের ভূমিকা ও অর্জন বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। স্বাধীনতার পর শুধুমাত্র ঢাকায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চলাচল করত। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা হয়। এ দুই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশে এসেই সরাসরি কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সেখানে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর রূপান্তরের কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের সম্প্রসারণ হচ্ছে
মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার আমাদের অন্যতম পর্যটন স্পট। পর্যটকদের পছন্দের জায়গা এটি। বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশে এসেই সরাসরি কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সেখানে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর রূপান্তরের কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের সম্প্রসারণ হচ্ছে।’
‘পাশাপাশি রাজশাহী, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ চলছে। এগুলোও আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে দেশের একপ্রান্তের লোক অন্যপ্রান্তে মানুষ যেতে পারবেন। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।’
দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে দেশের একপ্রান্তের লোক অন্যপ্রান্তে মানুষ যেতে পারবেন
মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম সম্পর্কে মাহবুব আলী বলেন, ‘সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নতুন দুটি ড্যাশ বিমানের উদ্বোধন হয়েছে। অনেক বন্ধ রুটে ফ্লাইট চালু হয়েছে। এছাড়া আমাদের বহরে বর্তমানে ১৬টি বিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। বিমান অত্যন্ত দক্ষতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স স্বাচ্ছন্দ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এটাও আমাদের অনেক বড় অর্জন।
সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নতুন দুটি ড্যাশ বিমানের উদ্বোধন হয়েছে। অনেক বন্ধ রুটে ফ্লাইট চালু হয়েছে। এছাড়া আমাদের বহরে বর্তমানে ১৬টি বিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন
মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের এমন অনেক দর্শনীয় স্থান আবিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত ঘুরতে যাচ্ছেন, ছবি তুলছেন, আনন্দ করছেন। এসব আমাদেরই অর্জন। এছাড়া বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে দক্ষিণবঙ্গে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন কাজ চলছে।
‘বর্তমানে সমুদ্রসৈকত ঘেঁষে আমাদের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক রয়েছে। চলতে চলতে এ সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। সরকার এ সড়কের সীমানা আরও বাড়িয়ে মীরসরাই পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’
এআর/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে