দক্ষতা বাড়লে নারীরা পিছিয়ে থাকবে না
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, আমি ওই নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে সফল হয়েছে। পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও এর সংখ্যা অনেক কম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনশগ্রহণ বাড়াতে হলে তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। যদি নারীদের দক্ষতা বাড়ানো যায় তবে তারা পিছিয়ে থাকবে না।
গতকাল ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘উইমেনস ক্যাফে: টেকসই ভবিষ্যতে নারীর অবদান’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার।
অনুষ্ঠানে চার্লস হোয়াইটলি তার বক্তব্যে বলেন, আমি এই অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। একটি কথা বলতে চাই, ইউরোপে একটি জেন্ডার বিষয়ক একটি কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে যা জেন্ডার সমতা রক্ষায় কাজ করে।
বিশেষ অতিথির প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনে নিয়ে আসতে স্ব স্ব জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। তাদের সমান সুযোগ দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের সৎ ইচ্ছা থাকতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। এ সময় তিনি ক্রিশ্চিয়ান এইড এর সকল পার্টনার্স সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান ।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের সফলতার গল্প তুলে ধরেন ট্রান্স কমিউনিটির প্রতিনিধি এমএক্স জয়িতা পলি। তিনি বলেন,পরিবার থেকে অবহেলা ও অনাদর নিয়ে আমার বেড়ে ওঠা। আমার কারণে আমার মাকেও আমার বাবা প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন। স্কুলে যখন যেতাম তখন আমার প্রতি সকলের দৃষ্টি ছিল বৈষম্যমূলক। এভাবেই প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এখানে এসে আমি দাঁড়িয়েছি।
প্রতিবন্ধী নারী বিষয়ক ন্যাশনাল কাউন্সেলরের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আকতার বলেন, নিজের কথা বলতে গেলে বলব অনেক প্রতিকূলতার মাধ্যমে আমি বড় হয়েছি। দুই বছর বয়সে পোলিও হয়ে আমার প্রতিবন্ধীত্ব আসে। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে পরিবারের মধ্যেই আমার প্রতি বৈষম্য শুরু হতে লাগল। আমার বাবা আমার অন্য ভাই-বোনদের স্কুলে পাঠালেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আমি স্কুলে যেতা পারতাম না।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমার পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে আমার মায়ের সহযোগিতায় আমি স্কুলে যাই। খুব কষ্ট করে আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাই। আমি এখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। অথচ পরিবারে আমার বাবা কোনো দিনই আমার প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাননি। আমার বাবা আমার ভাইবোনদের নতুন জামা কিনে দিলেও আমাকে কখনও কিনে দিতেন না। তখন থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। পরবর্তীতে আমি প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। এখন আমার বাবা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন ।
এনএফ