ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব ক্ষেত্রেই নারীর অবদান
নারীর অধিকার যে মানবাধিকার তা আমাদের এখনও বলে বলে প্রচার করতে হয় উল্লেখ করে বেসরকারি সংস্থা নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেছেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদান ছিল। কিন্তু তা লিপিবদ্ধ বা প্রচার পায়নি।
বুধবার (৯ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমের সভাপতিত্বে ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই অগ্রগণ্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, নারীর কোনো বিত্ত নাই, সম্পদে কন্ট্রোল নাই। তাই নারীকে বাসের ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সবাই যৌন নির্যাতন-হয়রানি করছে। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা সব নাগরিকের সমান অধিকার।
তিনি বলেন, সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২১ ধারায় নাগরিক এবং পাবলিক সার্ভিসের দায়-দায়িত্বের কথা পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নারীর স্বাস্থ্য শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি বার বার লঙ্ঘিত হচ্ছে। নুসরাত হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে, কিন্তু রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে। এটি যদি দ্রুত কার্যকর করা হয় তাহলে অপরাধীরা শিক্ষা পাবে। তারা যেন বুঝতে পারে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। আমাদের যে সব সুপারিশ তা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা মতবিনিময় করবো। সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, ফরেনসিক চিকিৎসকসহ সবার প্রশিক্ষণ, পাবলিক প্রসিকিউশনের ওপরে মনিটরিং, তাদের নিয়োগে রিফর্ম করতে হবে। ইনকোয়ারি প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার পর দেখতে হবে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্রটি আসলে কেমন। ২০১৫ সালের পর সহিংসতার চিত্র তোলার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু প্রত্যেকটি নির্যাতনের ধরন কেমন, ডাটাগুলো সংরক্ষিত নয়। আইনের সংশোধনে সুপারিশগুলো নির্ধারণ করতে হবে পূর্ণাঙ্গ ইনকোয়ারির পর। আইনটি যারা ব্যবহার করবেন তারা নিজেও ভালো জানেন না। সেখানেও রিফর্ম দরকার। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সকে ক্রিমিনাল আইনে আনতে হবে। যৌতুক নিরোধ আইনকে রিফর্ম করা হয়েছে। কিন্তু কিছু সংযুক্ত-বিলুপ্তির প্রয়োজন রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের খবরগুলো প্রচারে মিডিয়ার গাইডলাইনও ঠিক করা জরুরি।
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মালেকা বানু বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধে ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন। নইলে সমতা সম্ভব নয়। সুরক্ষা ও উন্নয়ন এক সঙ্গে চলবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হলেও মানবাধিকার কমিশনকে দেখতে হবে।
গণপরিবহনে নারী নিরাপদ না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেখানে বিশেষ সৃষ্টি দিতে হবে। নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা দফায় দফায় সুপারিশ করেছি। সবচেয়ে হিংস্র বহিঃপ্রকাশ নারীর প্রতি সহিংসতায়। সমান অধিকারকে যদি মানবাধিকারের দৃষ্টিতে দেখি তাহলে উত্তরাধিকার আইনও হতে হবে অভিন্ন। সরকার নানান সমীকরণ করতে থাকেন রাষ্ট্র পরিচালনায়।
আলোচনা সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ন্যাশনাল ইনকোয়ারি খসড়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি কনসালট্যান্ট আবুল হোসেন, মানবাধিকার কমিশন সদস্য জেসমিন আরা বেগম।
জেইউ/এসএম