দেবতাখুম : কোলাহলহীন হিমশীতল পাহাড়ি ঝর্ণা
যারা পাহাড় ভালোবাসেন, ঝর্ণা ভালোবাসেন; তাদের জন্য দেবতাখুম একটি চমৎকার জায়গা। বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত দেবতাখুম। বিশাল পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে চলা সংকীর্ণ পথের সুগভীর এই ঝর্ণার দৈর্ঘ্য প্রায় ছয়শ ফুট।
দেবতাখুমে যা দেখতে পাবেন
কোলাহলহীন নৈশব্দের এ পাহাড়তলিতে খুঁজে পাওয়া যাবে অন্যরকম শান্তি। উঁচু পাহাড়ের মাঝে বয়ে গেছে স্রোতধারা, যেটা ভেলা করে পার হতে হয়। বরফ শীতল পানির এই বন্য এলাকায় শীত এবং বর্ষায় দুই রূপই দেখতে পাওয়া যায়। এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ বর্ষাকালে ভেলায় কায়াকিং অথবা শীতে ট্র্যাকিং করতে এখানে আসেন। আঁকাবাঁকা সরু গুহা পথে ঠিক মত সূর্যের আলো পরে না বললেই চলে।
এখানে আশে পাশে ছোট বড় পাঁচ থেকে ছয়টি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ঝর্ণার পাশেই দেখা মিলবে ঝিরি ও পাইন্দু খাল। দেবতাখুমের দুই দিকে প্রায় ১০০ মিটার খাড়া সিপ্পি পাহাড়। পাহাড়ের খাঁজে জুমঘর কখনও ছোটখাটো পাথর দেখা যাবে। দেবতাখুম দুর্গম হলেও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। এসি বা ননএসি দু'ধরণের বাস চলে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৯৫০ টাকা। সেখান থেকে বাস, সিএনজি অথবা চাঁদের গাড়িতে করে রোয়াংছড়িতে যেতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা। রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী, এখনে সিএনজিতে খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সেখান থেকে শীলবান্দা পাড়ায় যেয়ে আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে ভেলায় ভেসে যেতে পারেন এই জায়গায়।
ভ্রমণের সময় যেসব জিনিস সঙ্গে রাখবেন
দেবতাখুম যেহেতু অনেক দুর্গম এলাকা তাই ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কিছু জিনিস মেনে চলা জরুরি। বিশেষ করে এমন দুর্গম এলাকায় সাধারণ জুতায় ট্র্যাকিং করা অস্বস্তিকর এমনকি বিপদজনকও বটে। তাই, একজোড়া ট্র্যাকিং সু নিবেন। যাত্রাপথের জন্য হালকা খাবার-দাবার সঙ্গে রাখবেন, কারণ ঘুরে আসতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে। সঙ্গে পানি নিতে ভুল করবেন না।
আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো, ফোন অপারেটরদের তেমন কোন নেটওয়ার্ক পাবেন না। তাই সেই ধরনের মানসিক প্রস্তুতি রাখবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে যাবেন, কারণ আর্মি ক্যাম্পে অনুমতি নিতে হবে। রাতে থাকার প্ল্যান করে থাকলে সঙ্গে তাঁবু নিয়ে যাওয়াই ভালো।
জেনে রাখা ভালো
দেবতাখুমের রাস্তায় পদে পদে বিপদজনক। বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রচণ্ড পিচ্ছিল হয়ে যায় এখানকার পাহাড়ি রাস্তা। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা থাকা জরুরি।
পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একজন গাইড সঙ্গে রাখা উচিত। এজন্য ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারেন।