করোনার কোন টিকায় কত দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন?
মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কতটা স্বাভাবিক হবে সেটাই এখন আলোচনার অন্যতম বিষয়। ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও আন্তর্জাতিক পর্যটন খাত সবেমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের ৩৭০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে অনেকেই বিদেশ ভ্রমণের জন্য তাদের ব্যাগ গোছানো শুরু করেছেন। কিন্তু করোনার যেকোনও ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেই আপনি অবাধে বিশ্বের যেকোনও দেশে ভ্রমণে যেতে পারবেন না।
বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ‘নির্দিষ্ট কিছু টিকার’ গ্রহীতা পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে। চলতি মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়া পর্যটকদের ইউরোপে ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদিও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড মূলত অ্যাস্ট্রাজেনেকারই টিকা। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইএমএ সেরামের কোভিশিল্ডের অনুমোদন দেয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন সিদ্ধান্তের পর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ভারত সরকার। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওই নীতি বিশ্বের সর্বত্রই কোভিশিল্ডের গ্রহীতাদের ক্ষতি করবে। ইতোমধ্যে ব্রিটেনেও কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে।
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রাভেলগাইড বিশ্বে এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিনগুলো নেওয়া থাকলে পর্যটকরা কতটি দেশে যেতে পারবেন তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারই গ্রহণযোগ্যতা বেশি রয়েছে। বিশ্বের ১১৯টি দেশ এখন পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিশ্বে এটিই সর্বাধিক ব্যবহৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং চীনের দু’টি ভ্যাকসিনও ডব্লিউএইচওর অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে, চীনের ক্যানসিনোবায়োর তৈরি করোনা ভ্যাকসিন মাত্র অল্প কয়েকটি দেশে অনুমোদন পেয়েছে।
এদিকে, ভ্রমণের সঙ্গে সমস্যাও থেমে নেই। আমেরিকার সীমান্ত ব্রিটিশ, ইউরোপীয়, চীনা এবং ভারতীয়দের জন্য এখনও বন্ধ আছে। মার্কিন সীমান্ত বন্ধ আছে অন্যান্য আরও কিছু দেশের জন্যও। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়া কানাডীয়রা সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না বলে শঙ্কিত। কারণ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ (এফডিএ) এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে এফডিএ অনুমোদন না দিলেও যুক্তরাষ্ট্র অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছে।
পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ, এ ধরনের বিধি-নিষেধ লোকজনকে বাড়িতে আবদ্ধ করে ফেলবে। বাণিজ্য-বিষয়ক সস্থা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের নিক কারিন বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের চুক্তির অভাবের কারণে পর্যটকরা ভ্রমণ নিয়ে আস্থাহীনতায় ভুগছেন। তবে যেসব ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে সেসব ভ্যাকসিন নেওয়া পর্যটকদের ভ্রমণের অনুমতি দিতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ডজনের বেশি দেশ বলেছে, তারা ইইউর বিধি-নিষেধ মানবেন না এবং কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনকে ইমিউনিটির প্রমাণ হিসেবে মেনে নেবেন। কিন্তু চীনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে না। যদিও চীনের একটি ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচওর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণে কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দিয়েছে কত দেশ?
• অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বের ১১৯টি দেশ
• ফাইজার-বায়োএনটেকের অনুমোদন মিলেছে ৮৯টি দেশে
• স্পুটনিক-৫ অনুমোদন দিয়েছে ৬৯টি দেশ
• সিনোফার্মের ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে ৫৯টি দেশে
• মডার্নার টিকার অনুমোদন দিয়েছে ৫০টি দেশ
• সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড ৪৫ দেশে অনুমোদন পেয়েছে
• সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে ৩৭ দেশ
• জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার অনুমোদন মিলেছে ৩৩ দেশে
• ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন অনুমোদন দিয়েছে ৬ দেশ
• ক্যানসিনোবায়োর টিকার অনুমোদন মিলেছে ৪ দেশে
সূত্র: ইকোনমিস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, কোভিড১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার।
এসএস