জলে মদ স্থলে মসজিদ! যে কৌশলে ট্যুরিজমে বিশ্বসেরা মালদ্বীপ
মালদ্বীপ, ভারত মহাসাগরের মাঝে ১২শর বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত অপরূপ সুন্দর এক দেশ। নীল সমুদ্রের মাঝে যেন ছোট ছোট মনি মুক্তা ছড়িয়ে আছে সেখানে! ভূসর্গ যদি কাশ্মির হয় তবে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ‘জলস্বর্গ’ মালদ্বীপ।
মালদ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের বলা হয় ‘ধিভেহি’ (Dhivehin’)। দেশটিতে প্রবাসী কর্মী আর পর্যটকদের আধিক্য বেশি। প্রচলিত আছে— মালদ্বীপের সড়কে হাঁটতে গেলে প্রতি মুহূর্তে আপনি কোনো না কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে ধাক্কা খাবেন। আরেকটি মিথ প্রচলিত আছে এমন— মালদ্বীপের তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা!
সম্প্রতি দেশটি ঘুরে আসার সৌভাগ্য হয়েছে এই প্রতিবেদকের। সত্যিই মালদ্বীপ স্বর্গীয় সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার মতো একটি দেশ। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসের ঘাটতি থেকে যাবে। আর দ্বীপ রাষ্ট্রটির এখানে সেখানে এত বেশি বাংলাদেশির দেখা পাওয়া যায় যে, মনে হবে এ যেন আরেক বাংলাদেশ!
বেশ সাজানো গোছানো মালদ্বীপের বড় আকর্ষণ সমুদ্রের নীল জলরাশি, সাদা বালুকাময় সৈকত, সৈকতজুড়ে খেজুর আর নারিকেল গাছ। সমুদ্রের পানির তলদেশেও খুঁজে পাবেন প্রকৃতির অসাধারণ রূপ। দেশটি একটু ব্যয়বহুল হলেও সেখানে ঘুরে আসার পর একবারও মনে হবে না আপনার টাকা জলে গেছে।
দেশটি ধর্মীয় আচারের ব্যাপারে বেশ কঠোর। ১০০ শতাংশ মুসলিমের দেশটিতে মসজিদ রয়েছে অলিগলিতে। স্থানীয়দের দেখেও বেশ রক্ষণশীল মনে হয়েছে। কোনো ধিভেহি নারীকে হিজাব বা বোরকা ছাড়া চোখে পড়েনি।
পর্যটননির্ভর দেশটিতে ট্যুরিস্টদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে— ট্যুরিস্টরা হচ্ছেন ভগবান, তাদের সাত খুন মাফ। রক্ষণশীল এ দেশটিতে আইনকানুন অনেক কঠোর। এর মধ্যেও জায়গাভেদে ট্যুরিস্টদের অনেক ছাড় দেওয়া হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে— এই দেশটির সড়কে পুলিশের দেখা মেলা ভার! দেশটির বড় দুই শহর মালে ও হুলহুমালের সড়কে ট্রাফিক লাইট এবং পুলিশের দেখা খুব একটা মেলেনি। তারপরও সড়কে সবাই সিগনাল মেনে চলছেন। কাউকে একবারও সিগন্যাল অমান্য করতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কোথাও গাড়ির একটা হর্নের শব্দও শোনা যায়নি।
সড়কে সবচেয়ে বেশি দেখা মিলবে স্কুটির। গরিব থেকে ধনী সবার কিছু থাকুক বা না থাকুক একটা স্কুটি আছে। এগুলো সড়কের পাশে পার্ক করা থাকে। এর জন্য আলাদা কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
এছাড়া হর্ন না বাজানোর ক্ষেত্রে দেশটির মানুষের এক ধরনের ‘রিচুয়াল’ও রয়েছে। একটা অভিজ্ঞতা বলি— দীর্ঘদিনের অভ্যাস আর বাঙালি হওয়ার সুবাদে মালে শহরের ফুটপাত ছেড়ে একটি ছোট সড়কের মাঝখান দিয়ে আনমনে হাঁটছিলাম। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি একটি গাড়ি আমার হাঁটার চেয়েও কম গতিতে পেছন পেছন আসছে। কিন্তু একবারও হর্ন বাজিয়ে সাইড চায়নি। দেখার পর আমি ‘সরি’ বলে সাইডে সরে গেলাম। একটুও রাগ না করে ওই গাড়ির চালক মুচকি হাসি দিয়ে চলে যান। ভাবুন তো, ঢাকা শহরে এ কাজটি করলে কী হতো? আমার প্রাণ নিয়ে টানাটানি চলত। আর কত গালি শুনতে হতো তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
পর্যটননির্ভর দেশটির বিজনেস স্ট্র্যাটেজি আমার কাছে বেশ চমকপ্রদ লেগেছে। অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বাগধারার মতো। পর্যটন এলাকায় বার রেস্টুরেন্ট থাকবে না তা কী করে হয়! এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটেছে দেশটির সরকার। যেসব দ্বীপে স্থানীয়দের বসবাস সেসব জায়গায় বার রাখেনি তারা। আলাদা বিলাসবহুল আইল্যান্ড তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে মদ আর প্রমোদের ব্যবস্থা।
রক্ষণশীল এ দেশটিতে মাদক তো দূরের কথা, একটি মদের বার পাওয়াও দুষ্কর। এ বিষয়ে তাদের আইনও অনেক কঠোর। স্থানীয়দের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন করলে ‘বাঁকা চোখ’ দেখতে হয়েছে। কারণটা হতে পারে দেশটি ধর্মীয় আচারের ব্যাপারে বেশ কঠোর। ১০০ শতাংশ মুসলিমের দেশটিতে মসজিদ রয়েছে অলিগলিতে। স্থানীয়দের দেখেও বেশ রক্ষণশীল মনে হয়েছে। কোনো ধিভেহি নারীকে হিজাব বা বোরকা ছাড়া চোখে পড়েনি।
তাল ঠিক রেখে পর্যটননির্ভর দেশটির বিজনেস স্ট্র্যাটেজি আমার কাছে বেশ চমকপ্রদ লেগেছে। অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বাগধারার মতো। পর্যটন এলাকায় বার রেস্টুরেন্ট থাকবে না তা কী করে হয়! এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটেছে দেশটির সরকার। যেসব দ্বীপে স্থানীয়দের বসবাস সেসব জায়গায় বার রাখেনি তারা। আলাদা বিলাসবহুল আইল্যান্ড তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে মদ আর প্রমোদের ব্যবস্থা। এসব আইল্যান্ডে মূলত ওয়ার্কার আর ট্যুরিস্টদেরই বসবাস এবং আনাগোনা থাকে।
একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দ্বীপ মাফুশি। দ্বীপটিতে অনেক স্থানীয় লোকের বাস। এটি আবার ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনও। এ দ্বীপটির ভূখণ্ডে সরাসরি বার না থাকলেও সমুদ্রের মাঝে ক্রুজ শিপে বানানো হয়েছে মদের বার।
ওইসব আইল্যান্ডের প্রতিটির অবকাঠামো ইউরোপ-আমেরিকার শহরের আদলে তৈরি করা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বচ্ছ পান্নাসবুজ জল, সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ, প্রবাল, স্নোরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সুযোগ। এককথায় পর্যটকদের জন্য স্বর্গরাজ্য সেসব আইল্যান্ড।
এক একটা আইল্যান্ডে প্রবেশের পর মনে হবে— একেক রকম বহুরূপী জগত, নেই কোনো বাধা ধরা নিয়ম। যার যা খুশি সে তা নিয়ে ব্যস্ত। বলা যায়, পর্যটকদের চাহিদা পূরণে ভান্ডারের সমস্ত সম্ভার নিয়ে বসে আছে একেকটি দ্বীপ। তাই তো হানিমুনের জন্য নবদম্পতি থেকে শুরু করে বলিউড, হলিউড সুপারস্টারদের পছন্দের শীর্ষ গন্তব্য এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
সমুদ্রের মাঝে এমন একটি আইল্যান্ডের নাম ‘ক্রসরোড’। মালে শহরের ৭ নম্বর জেটিঘাট থেকে স্পিডবোটে যেতে হয় আইল্যান্ডটিতে। যদিও দ্বীপটিতে একরাত কাটাতে থাকা-খাওয়াসহ সর্বনিম্ন ব্যয় করতে হবে ৫০০ ডলার। কেউ চাইলে দিনে দিনেও ঘুরে আসতে পারবেন আইল্যান্ডটি থেকে। তার জন্য আপনাকে আগে থেকেই অনলাইনে রেজিস্ট্রশন করে রাখতে হবে। সেজন্য এক টাকাও ভাড়া দিতে হবে না। কিন্তু সেই দ্বীপে গিয়ে জনপ্রতি খরচ করতে হবে ২০ ডলার করে। বের হওয়ার সময় দেখাতে হবে খরচের বিলের কাগজ।
এখানে ভ্রমণে গেলে একবারও মনে হবে না আপনি কোনো শতভাগ মুসলিমের এক রক্ষণশীল দেশে আছেন। দ্বীপটির অলিগলিতে সর্বত্র মদের বার আছে। আছে ডান্স ক্লাব, সুইমিং পুল, বিচ পার্টিসহ পর্যটক চাহিদার সবকিছু।
একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দ্বীপ মাফুশি। দ্বীপটিতে অনেক স্থানীয় লোকের বাস। এটি আবার ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনও। এ দ্বীপটির ভূখণ্ডে সরাসরি বার না থাকলেও সমুদ্রের মাঝে ক্রুজ শিপে বানানো হয়েছে মদের বার। যেখানে স্পিডবোটে করে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয়। ক্রুজ শিপে যাতায়াতে আপনাকে এক টাকাও ভাড়া গুনতে হবে না। এক কথায় তারা নিজেদের নীতিও ঠিক রাখছে আবার বিদেশি অতিথিদেরও আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করছে।
এসব আইল্যান্ডেও দেখা মিলবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। নিজ চোখে দেখে যা মনে হলো— দেশটিতে অপরাধের হার বোধহয় কিছুটা কম।
মালদ্বীপের কোরাল দ্বীপে গিয়ে পরিচয় হয় ইউরোপিয়ান মা-মেয়ের সঙ্গে। তারা বুলগেরিয়া থেকে দেশটিতে ঘুরতে এসেছেন। আমাকে দেখে লোকাল ভেবে নিজ থেকে এসে কথা বললেন। এক কথা, দুই কথা, তারপর বহু কথা...। এর মধ্যে উঠে আসে মালদ্বীপ থেকে পুরো বিশ্বের ইস্যু।
তাদের একজনের নাম ডিমিট্রিনা কস্তাভিনা, আরেকজন টিসভেটেলিনা কস্তাভিনা। এদের একজন ডাক্তার, অপরজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী। তারা ৭ দিনের ছুটি কাটাতে এসেছেন এখানে। তাদের কথায়ও ফুটে ওঠে মালদ্বীপ নিয়ে মুগ্ধতা।
মালদ্বীপের আইল্যান্ডগুলোতে নামে-বেনামে বিনিয়োগ রয়েছে বহু বিদেশির। এর মধ্যে রয়েছেন তারকা খেলোয়াড়, নাম করা ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র তারকা এবং বহু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ডিমিট্রিনা কস্তাভিনা বলেন, কোরাল দ্বীপ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এক কথায় মালদ্বীপিয়ান গেটওয়ে আমাকে প্রভাবিত করেছে। আমি মনে করি— প্রতিদিন ব্যক্তিগত দ্বীপ (প্রাইভেট আইল্যান্ড) ভ্রমণ হলো মালদ্বীপ ঘুরে দেখার সেরা উপায়। প্রথমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঢুকতে হবে, তাদের পরিবারের অংশ হয়ে তাদের জীবনযাত্রা দেখতে হবে। তারপর ব্যক্তিগত দ্বীপ উপভোগ করতে হবে। এই বিশ্বে যে দেখার মতো এমন মিরাকল জায়গা আছে তা আমি মালদ্বীপ ভ্রমণ করে বুঝেছি।
তিনি আরও যোগ করেন, সাদা বালি, ফিরোজা রঙের পানি এবং তালপাতার পাশাপাশি অবিশ্বাস্য পানির নিচের জীবন- আশ্চর্য প্রবাল, রঙিন মাছ, কচ্ছপ ইত্যাদি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি দেশটির সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং পানির নিচের জীবনের প্রেমে পড়ে গেছি।
এসময় অনেকটা মজা করেই বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে কোনো ধিভেহিকে বিয়ে করে দেশটিতে থেকে যেতে চাই।
কথা হয় মালদ্বীপের তরুণী ইয়ুসরা মোহাম্মেদের সঙ্গে। তার এক বোন বাংলাদেশের মেডিকেলে পড়াশোনা করছেন। সেই সুবাদে আড্ডাটা ভালো হয়। ইয়ুসরা পড়াশোনা করেছেন শ্রীলঙ্কায়। এখন মালদ্বীপে একটি থাই কোম্পানিতে কাজ করছেন। যেটি মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
গ্রীষ্মকালে মালদ্বীপেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক অবস্থান করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যটন বিকাশের জন্য এখানে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের মালিকানাধীন গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে মালদ্বীপে। এর ফলে আপনি স্থানীয়দের কাছে যেতে পারবেন, তাদের জীবনযাত্রা দেখতে পারবেন।
তিনি বলেন, মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি মালদ্বীপে কাজ করছেন। আমাদের কর্মক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বাঙালি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মালদ্বীপের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আরও বেশি শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদেশি অতিথিদের প্রসঙ্গে ইয়ুসরা বলেন, বিলাসবহুল রিসোর্ট-পরিষেবা এবং আরও অনেক কিছুর জন্য মালদ্বীপ দ্রুত পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় দেশ হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মকালে মালদ্বীপেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক অবস্থান করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যটন বিকাশের জন্য এখানে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের মালিকানাধীন গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে মালদ্বীপে। এর ফলে আপনি স্থানীয়দের কাছে যেতে পারবেন, তাদের জীবনযাত্রা দেখতে পারবেন।
২০২১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমান সেবা চালু করে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। এর পর থেকে মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৩ হাজার ৯২৩ থেকে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৩৩৬-এ। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। কারণ, ইউএসবাংলা ফ্লাইট চালু করার পর অন্য বিমান সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়।
ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ-বিস্তৃত গভীর জল থেকে উঠে আসা এক হাজারেরও বেশি দ্বীপ এবং আরও হাজার হাজার প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গড়ে ওঠা মালদ্বীপ পর্যটকদের সর্বোচ্চ আতিথেয়তা দিতে জানে বলেও উল্লেখ করেন ইয়ুসরা।
মালদ্বীপের আইল্যান্ডগুলোতে নামে-বেনামে বিনিয়োগ রয়েছে বহু বিদেশির। এর মধ্যে রয়েছেন তারকা খেলোয়াড়, নাম করা ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র তারকা এবং বহু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মালদ্বীপ বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিটির সভাপতি প্রবাসী ইমরান হোসাইন তালুকদার বলেন, মালদ্বীপের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একেকটা আইল্যান্ডে ছোট ছোট সৈকত থাকার ফলে সুন্দরভাবে সেগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পেরেছে তারা। দেশটিতে নাগরিকদের জন্য এক ধরনের আইন প্রচলিত থাকলেও অতিথিদের জন্য আইন ভিন্ন। আর সুযোগ-সুবিধাও আলাদা। বিরক্ত তো দূরের কথা, স্থানীয়রা ট্যুরিস্টদের বেশ সমীহ করেন। এমনকি ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে অতিথিদের পারাপারের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি তুলনা করি, আমাদের দেশের পরিবেশ হলো ‘যত বেশি খারাপ হতে পারে’, আর এদেশের পরিবেশ হলো ‘যত বেশি ভালো হতে পারে’। দেশটিতে সড়ক পথ বেশি না থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত। পানিপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ ও দ্রুতগতির। সবসময় স্পিডবোট, নৌকা আর ফেরি পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক পর্যটন এরিয়ায় স্থানীয়দের প্রবেশ সীমিত থাকে। কিছু আইল্যান্ডে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন না দেশটির নাগরিকরা।
ব্যয়বহুল এ দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে দিনে দিনে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যাও বেড়েছে। মোট পর্যটকের ৬৯% এখন বাংলাদেশ থেকে যান। এর পেছনে বড় অবদান দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার।
২০২১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমান সেবা চালু করে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। এর পর থেকে মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৩ হাজার ৯২৩ থেকে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৩৩৬-এ। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। কারণ, ইউএসবাংলা ফ্লাইট চালু করার পর অন্য বিমান সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়।
আগে দেশটিতে ভারত বা শ্রীলঙ্কায় ট্রানজিট নিয়ে যাওয়া-আসায় অনেক সময় লেগে যেত। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কল্যাণে এখন মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে মালেতে যাওয়া যায়। এই চার ঘণ্টার যাত্রায় ইউএসবাংলার বিমানবালাদের সেবাও দারুণ! পেশাগত দক্ষতা আর সুন্দর ব্যবহার দিয়ে সেবা দিতে দেখা গেছে তাদের। যাত্রীরা সবাই নিজ ভাষা বাংলায় নিজেদের সমস্যা তাদের জানাতে পারছেন।
২০২১ সালের আগে মালদ্বীপ যেতে ওয়ানওয়েতে খরচ পড়ত ৫০ হাজার টাকার বেশি। বর্তমানে ওয়ানওয়েতে খরচ পড়ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। আপ-ডাউনে লাগছে ৪৫ হাজার টাকার একটু বেশি।
চলবে...
(দ্বিতীয় পর্বে থাকছে— ‘সৌদি-কুয়েতের চেয়ে মালদ্বীপে অনেক শান্তি, বেতনও ভালো’)
এমজে/