চন্দ্রনাথ পাহাড়ের রহস্য উন্মোচন
ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছি সেই শৈশব থেকে। কিন্তু মনে আগ্রহ থাকার পরও ভ্রমণ করার জন্য সাহসটুকু পাচ্ছিলাম না। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হলো আমার স্বপ্ন পূরণ। আমি আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে, আমার মা আমাকে একা কোথাও যেতে দেন না। তবু মাকে অনেকভাবে বুঝিয়ে রাজি করালাম। তার অনুমতি নিয়েই বেশ কিছু স্থানে ভ্রমণ করেছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো চন্দ্রনাথ বিজয়।
বলে রাখা ভালো, চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত; ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশ্রিত একটি মনোমুগ্ধকর স্থান- চন্দ্রনাথ পাহাড়। বাংলাদেশের এই মনোমুগ্ধকর তীর্থস্থানে একটি রূপান্তরমূলক অভিযান শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আমার এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।
শতাব্দী ধরে চন্দ্রনাথ পাহাড় আধ্যাত্মিক অন্বেষণকারীদের জন্য পবিত্র স্থান। ইট ও পাথরের পুরনো চন্দ্রনাথ মন্দিরে চলছে প্রার্থনা, ধ্যানমগ্নতা। স্থানীয়দের আচারণ সহনশীল মনে হলো। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত স্থাপত্যের বিস্ময়, প্রার্থনা এবং ধ্যানের পরিবেশে নিজেকে গিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান ভ্রমণপিপাসুরা।
১১৫২ ফুট উপরে ওঠা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও লক্ষ্য এটিই ছিল। আমরা ৫ জনের একটি ছোট দল গিয়েছি। দলের সবার থেকে বেশি সাহস থাকার পরও আমি ১টি বাঁশের লাঠি কিনেছি। বেশকিছু স্থানে দিয়ে ট্রেকিং করার সময় গ্রুপ মেম্বারদের সহযোগিতা নিয়েছি। সঙ্গে করে কিছু খাবার ও স্যালাইন নিয়েছি। এটি আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো, পাহাড়ের উপর সব কিছু দাম তুলনামূলক দিগুণ থাকে। এর বড় কারণ হলো নিচ থেকে উপরে কোনো কিছু নিয়ে ওঠা খুব কষ্টসাধ্য।
অবশেষে সব সমস্যার সমাধান করে সাহস সংগ্রামে চন্দ্রনাথ জয় করছি। বিশ্বাস করুন, উপরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আমার কোনো কষ্টই হয়নি। চন্দ্রনাথ পাহাড় শুধু আধ্যাত্মিক আশ্রয় নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভয়ারণ্যও। এছাড়া এই শান্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণি যখন আপনি দেখতে পাবেন, তখন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণের পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়াই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এখানকার হাট-বাজার, স্থানীয় খাবার খুবই আকর্ষণীয়। আমাদের ভ্রমণটি ছিল একদিন ও দুই রাতের। রাতে যাওয়া আসা চাঁদপুর থেকে ট্রেনে করে। ১দিন ট্রেকিং করেছি; ব্যক্তি ভেদে যেকোনো ভ্রমণের খরচ ওঠানামা করে, আমাদের খরচ খুব বেশি হয়নি।
চন্দ্রনাথ পাহাড় এমন একটি জায়গা যেখানে ইতিহাস এবং সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়, এই সাংস্কৃতিক আশ্রয়স্থল থেকে ফিরে আসার সময় আমি সঙ্গে করে বিস্ময়ের নতুন অনুভূতি নিয়ে এসেছি। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে গভীর সংযোগ এবং বাংলাদেশের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা রহস্য অনুসন্ধানের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছি।
শিক্ষার্থি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর ঢাকা।