ঈদের ছুটিতে মায়ের সঙ্গে বান্দরবান
পাহাড় সবসময়ই আমাকে কাছে টানে। উঁচু নিচু পাহাড় আর কিলোমিটার এর পর কিলোমিটার পাহাড় দেখতে কার না ভালো লাগে? আকাশে মেঘে মেঘে খেলা চলে। আর সে জন্য পাহাড়ের বুকে কোথাও রোদ কোথাও ছায়া। দেখতে অন্যরকম রকম ভালো লাগে। পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে বেড়িয়েছি সারাদিন। বান্দরবান থেকে চিম্বুক পাহাড়, টাইটানিক ভিউ, ডাবল হ্যান্ড ভিউ, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এবং নীলাচল।
২২ এপ্রিল শনিবার, ঈদ উল ফিতরের দিনে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দুপুর দেড়টায় বাসে করে রওনা দিই আমরা। আমি ও মাসহ মোট ২ জনের এই ট্যুর। দুপুরে সরাসরি বান্দরবান এর কোনো বাস না পাওয়াতে আমরা কক্সবাজারের বাসে উঠি। সাড়ে ৯ টার সময় আমরা চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার কেরানির হাট পৌঁছে যাই। সেখান থেকে সিএনজি করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই। এতো রাতের বেলায় পাহাড়ি আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে যেতে একটু ভয় ও করছিল আর ভালোও লাগছিলো।
রাত ১০.৩০ টায় আমরা বান্দরবান শহরে পৌঁছে যাই। সেখানে আমাদের হোটেল গার্ডেন সিটিতে রুম ঠিক করা ছিল। আমরা পৌঁছতেই সেখানে আমাদের ওয়েলকাম জানালেন সেই হোটেলে মালিক। তারপর রুম দেখিয়ে দিলেন। দুই বেডের সিঙ্গেল রুম ছিল আমাদের। ওয়াশ রুম ও ভালো ছিল। হোটেলটাও ভালো ছিল। আমাদের কাছ থেকে রুম এর ভাড়া নিয়েছে মাত্র ১,০০০ টাকা। রুমে টিস্যু বক্স, দুই লিটরে পানির বোতল, শ্যাম্পু, সাবান এবং প্রয়োজনীয় সবই ছিল। রুম এ পৌঁছে আমি খাবার হোটেল খুঁজতে যাই। রাতে খাওয়ার জন্য এতো রাতে তেমন কিছুই পাইনি। কেক, বিস্কুট, জুস, পানি এসব দিয়েই রাতের খাবার শেষ করতে হয়েছে। সকালে ঘুরতে যাবার জন্য মাহিন্দ্রা সিএনজি ঠিক করে রাখলাম। তারপর গোসল করে শান্তির ঘুম দিলাম।
২৩ এপ্রিল রবিবার, সকালে ৬.৩০ এ ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করে নেই। তারপর সকাল ৭টায় আমরা মাহিন্দ্রা সিএনজি করে নীলগিরির পথে রওনা দেই। নীলগিরি যাওয়ার পথে প্রথমেই চিম্বুক পাহাড় পৌঁছে যাই। সেখানে জন প্রতি ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করি। চিম্বুক পাহাড় খুব এ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এখন থেকে দূরের সব পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। দৃশ্যটা সত্যিই সুন্দর।
এরপর আমরা পৌঁছে যাই টাইটানিক ভিউতে। এই জায়গাটা খুবই গোছানো। প্রকৃতি যেন তার পুরো সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। এখানে আমরা চিপস ও চা খেয়ে পরের দৃশ্য দেখতে রওনা হই। আপনাদের বলে রাখি, আমরা সারা দিনের জন্য সিএনজি রিসার্ভ করেছিলাম। সব মিলিয়ে ভাড়া দিয়েছিলাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সেখান থেকে আমরা পৌঁছে যাই ডাবল হ্যান্ড ভিউতে। ডাবল হ্যান্ড ভিউতে সাদা মেঘের খেলা চলে। দেখে আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। সেখানে বেশ কিছু সময় কাটাতে পারেন প্রকৃতির মাঝে।
প্রায় ৪৮ মিলোমিটার পাহাড়ি আঁকা বাঁকা আর উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সকাল ৯.৩০ এর দিকে পৌঁছে যাই নীলগিরিতে। সেখানে জন প্রতি ১০০ টাকা করে টিকিট এবং কার পার্কিং এর জন্য আরও ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। প্রবেশ পথ থেকেই সৌন্দর্যে ভরা এই নীলগিরি। প্রথমে উপরের দিকে উঠে যেতে হবে। ডান পাশে মসজিদ, পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা ওয়াশ রুম এর ভালো ব্যবস্থা আছে। চারপাশ গাছে গাছে সাজানো।
দূরের সব পাহাড় দেখা যায় এখন থেকে। এখানে অনেক গুলো রিসোর্ট আছে। আপনি চাইলেই এখানে এক রাত থেকে যেতে পারেন। আরও সামনে এগিয়ে গেলে হেলিপ্যাডও দেখতে পাবেন। এখানে আমরা কিছুটা সময় কাটিয়ে বের হই। পাশে অনেক দোকান আছে। পাহাড়ি বিভিন্ন ড্রেস, ডাব, পাঁকা তেতুল, কাঁঠাল, পেঁপে আরো কত কি। এখানে আমরা ডাব খাই। ডাবের মূল্য ছিল ১০০ টাকা করে। আনুমানিক সাড়ে ১০ টার সময়ে আমরা আবার বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হই।
সেখান থেকে দুপুর ১ টায় আমরা পৌঁছে যাই বান্দারবন শহরে। হোটেল আল মদিনা থেকে দুপুরের খাবার খাই। ঈদের ছুটির কারণে খাবার তেমন কিছুই ছিল না। চিকেন, সবজি দিয়ে দুপুরে খাবার শেষ করি।
তারপর সেখান থেকে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র দেখতে বের হই। জনপ্রতি ৫০ টাকা করে টিকেট কিনতে হয় আমাদের। প্রবেশ করতেই হাতের ডান পাশে সুন্দর ছোট একটি নামাজের জায়গা পেয়ে যাবেন। সিঁড়ি বেয়ে বা ঢালু রাস্তায় নিচে নেমে যেতে হবে আপনাকে। দুইটি জুলন্ত ব্রিজ পাবেন এখানে।
১ নং জুলন্ত ব্রিজ পারি দিয়ে আমরা ওপারে চলে যাই। এখানে বেশ কয়টি একটিভিটি করতে পারবেন আপনি। যেমন লেকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো। ক্যাবল কারেও আপনি চড়তে পারেন জন প্রতি ৫০ টাকা টিকিট কেটে। মহিলাদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা আছে। রেস্ট করার জন্য এবং বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্যও আছে দারুণ সব ব্যবস্থা।
এখানে আমরা ক্যাবল কারে উঠি। উপর থেকে নিচের দৃশ্য দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো যে আমি হেলিকপ্টারে আছি। সেখান থেকে আমরা যাই স্বর্ণ মন্দির দেখার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এটা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র স্থান। তাই অন্যদের এখানে প্রবেশ নিষেধ। তবে ব্রিজের উপর থেকে স্বর্ণ মন্দিরটি স্পষ্ট করে দেখতে পাওয়া যায়। সবশেষ আমরা রওনা দেই নীলাচলে উদ্দেশ্যে।
আনুমানিক বিকাল ৪টায় আমরা পৌঁছে যাই নীলাচলে। বিকালে ভালো একটি সময় পার করেছি। এখানে শিশুদের জন্য শিশু পার্ক আছে। ভিতরে দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা আছে। পুরো জায়গাটা সাজানো হয়েছে অনেক সুন্দর করে। বিকালের বাতাসে দূরের পাহাড় দেখতে দেখতে কখন যে আপনার সময় চলে যাবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।
নীলাচল থেকে কাঁচা আম, মরিচ আর লবণ দিয়ে খেয়ে আমরা সেখান থেকে সোজা পৌঁছে যাই বান্দরবান বাস স্টেশনে। সৌদিয়া এসি বাসের টিকেট কাটি। জন প্রতি ১,২০০ টাকা করে দিতে হয়েছিল। রাত সাড়ে ৯ টায় রওয়ানা দিয়ে ভোর ৪টায় ঢাকায় পৌঁছাই।
এই ছিল আমাদের এবারের একদিনের বান্দরবান ট্রিপ।