অনিন্দ্য সুন্দরের খোঁজে মেঘালয়ে
মেঘালয়, যার শাব্দিক অর্থ মেঘের বাড়ি। যেখানে চাইলেই হাত দিয়ে মেঘ ছোঁয়া যায়। মেঘের সমুদ্রে স্নান করা যায়। এমন অনিন্দ্য সুন্দর উপভোগ করতে আমরা ৩ জন যাত্রা শুরু করি।
গত ১১ জুলাই রাতে ঢাকা থেকে বাস ছাড়ে। তামাবিল বর্ডারে পৌঁছাই পরদিন সকাল ৮ টায়। বর্ডারে লোকজনের ভিড় দেখে চোখ কপালে! বাংলাদেশ থেকে যারা ডাউকি বর্ডার হয়ে মেঘালয় যেতে চান, তাদের দুই দেশ মিলিয়ে মোট ৬টি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।
প্রথমে বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস তারপর বিজিবির এন্ট্রি শেষ করে ভারতেও একই কাজ করতে হয়। শুরুতে বিএসএফ এর রেজিস্টারে এন্ট্রির করতে হয়। পরে ইমিগ্রেশন বিল্ডিংয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
প্রায় ৩শ জনের সিরিয়াল শেষে দুই দেশের ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ঘণ্টা লেগে যায় এখানে।
ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করে আমরা ডাউকি বাজারে যাই। সেখানে টাকার বিপরীতে রুপি কেনা যায়। যদিও টাকার বিপরীতে রুপি কেনা আইনগত অবৈধ। তবুও এখানে হরদম রুপি বিকিকিনি হয়।
এরপর ডাউকি বাজার থেকে ৪৫০০ রুপি দিয়ে ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করি। ড্রাইভার আমাদের তিনটি সাইট সিয়িং দেখাবে। ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করার আগে ড্রাইভারকে প্রতিটি সাইট সিয়িং প্লেসের কথা স্পষ্টভাবে বলে দিই। ভাড়া করার সময়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে নেওয়াই ভালো। না হলে পরবর্তীতে ঝামেলা হয়।
ডাউকি বাজার থেকে ভারতের সাইড থেকে সিলেট (জাফলং) এরিয়া দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। ডাউকি ব্রিজ পার হবার সময় জাফলংয়ের দিকে তাকাতেই অন্যরকম এক সিলেট চোখে ভেসে উঠলো।
পরিকল্পনা অনুসারে প্রথমে ‘উমক্রেম ফলস্’, তারপর ‘বরহিল ফলস’, তারপর এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর আর পরিষ্কার গ্রাম ‘রিওয়াই ভিলেজ’ এবং ভিলেজের ভেতরের ‘সিঙ্গেল রুট ব্রিজ’ দেখি।
ডাউকি থেকে ১২ মিনিট দূরত্বের উমক্রেম ফলসে ১৫ মিনিটের মত সময় কাটাই। এরপরে রওনা দিই ‘বরহিল ফলস’ দেখতে। যেটা ‘পান্থুমাই ঝর্ণা’ নামে পরিচিত। ঝর্ণার অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য আর পানির কলকল শব্দে চারপাশ মুগ্ধতার ছড়াছড়ি।
‘বরহিল’ (পান্থুমাই) ফলসেও প্রায় ১৫ মিনিটের মত সময় কাটিয়ে চলে যাই এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর এবং পরিষ্কার গ্রাম রিওয়াই ভিলেজ (মাউলি লন ভিলেজ)’ এবং সিঙ্গেল রুট ব্রিজ দেখতে। যখন আমরা ভিলেজে পৌঁছাই তখন বেলা আড়াইটা। দুপুরের খাবার এই ভিলেজের ‘কে কে রেস্টুরেন্ট’ এ সেরে নিই। গ্রামটা যেমন স্বচ্ছ, সুন্দর ও পরিষ্কার ঠিক রেস্টুরেন্ট টাও। ৩ জনের খাবারের বিল আসে ৬২০ টাকা।
এরপর গেলাম সিঙ্গেল রুট ব্রিজ। কি অসাধারণ তার রূপ। গাছের শিকড়ের উপর তৈরি করা ব্রিজ। বছরের পর বছর ধরে ব্রিজটির সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব দুটিই বিদ্যমান। এমন অনন্য সুন্দর রূপ ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু আমাদের আজকের পরিকল্পনা অনুযায়ী চেরাপুঞ্জি শহরে রাতে থাকবো। ভিলেজ থেকে যেতে প্রায় ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। রাত ৮ টার পর চেরাপুঞ্জি শহরের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, তাই দেরি না করে রওনা দিই চেরাপুঞ্জি শহরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু যাওয়ার পথে এমন দুইটা ভিউ পয়েন্ট পাই যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল পাহাড়, পাহাড় বেয়ে যেনো সৌন্দর্য ঝরে ঝরে পড়ছে। তার উপরে শেষ বিকেলের মিঠাই রঙ্গা আলো-আঁধির খেলা।
চেরাপুঞ্জি পৌঁছতেই সন্ধ্যা। ঢাকা থেকে বুকিং করে আসা হোম স্টে (গো-সেন হোম স্টে) খুঁজে বের করে চেক ইন করলাম। এখানে একটি কথা বলা উচিত, চেরাপুঞ্জি শহরের কমার্শিয়াল হোটেল ছাড়া আর কোনো হোটেলে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা নেই। হোম স্টে গুলো গেস্ট এর সুবিধার্থে মালিক পক্ষ তাদের মোবাইল এর হটস্পট শেয়ার করে। এই অভিজ্ঞতাটা বেশ নেতিবাচক।
রাতের চেরাপুঞ্জি’র যেনো অন্য এক রূপ। রোদের তাপ দাহে সেদিন পুড়লেও রাত ৯ টার দিকে চেরাপুঞ্জি হয়ে গেলো ঠাণ্ডার শহর। হুট-হাট বৃষ্টি কিংবা মেঘের গর্জন আর বিজলি চমকানো এখানে খুব কমন।