ফোন হারিয়ে গেলে কি করবেন?
২০২০ এর দিকে ঢাকায় আমার ব্যবহার করা ফোনটি পড়ে যায় কিংবা আমারই পকেট থেকে চুরি হয়। তখন ফোন না পেয়ে একটুও শকড হইনি, কারণ এইরকম ঘটনা ঢাকায় প্রতিদিন অসংখ্য ঘটছে। তাই বেশি চিন্তা না করে প্রথমেই একাউন্টগুলো রিমোটলি রিসিভ করি। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে ফোন করে নম্বরগুলো বন্ধ করে দিই। পরবর্তীতে দুইটি থানায় জিডিও করি। জিডি করতে কোন টাকা খরচ হয়নি।
থানা থেকে বের হয়ে আরেকজনের ফোন থেকে ফেসবুকে পোস্ট দেই, আমার ফোন হারিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ( সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ ) নাজমুল ভাই মন্তব্য করলেন, দ্রুত তাকে সব তথ্য দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি সিআইডি সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে থেকে একজন অতিরিক্ত এসপি তাকে তথ্য দেওয়ার জন্য বললেন। এরপর র্যাব সাইবার সেল থেকে তথ্য চাইলে সেখানেও তথ্য দিলাম।
তারপর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তথ্য দিয়ে রাখলাম। বিষয়টি সবার ওপর ছেড়ে দিয়ে চলে গেছিলাম সুনামগঞ্জে। সেখানে ইচ্ছে মত ঘুরাঘুরি করলাম। এরমধ্যে ফোনের কোন খোঁজ পেলাম না। বুঝলাম হয়তোবা পাওয়া যাবে না।
এরপর নতুন একটা ফোন নিয়ে বাসায় ফিরি। বাসায় ফেরার কয়েক দিন পর সিআইডি সাইবার পুলিশের অতিরিক্ত এসপি হিরক আহসান ভাইকে কল দেই। তখনও নতুন সিম লাগানো হয়নি। এরপর কাউন্টার টেরিজম সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের (ডিএমপি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ ভাইকে কল দিয়ে উনাকেও সব তথ্য দিই। তিনিও উনার মতো চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো সিম সেখানে তখনো ইনসার্ট করা হয়নি।
পরবর্তীতে একটি এজেন্সিকেও তথ্য দিয়েছিলাম। তারা হঠাৎ একদিন কল দিয়ে বলল ফোনের অবস্থান পাওয়া গেছে। ফোনে ইনপুট করা সিমের নম্বর এবং সেই সিম ব্যবহার যে করে তারও ছবি ও পাওয়া গেছে। সেইগুলা তারা দ্রুত আমাকে দেয়।
আমি সেগুলা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে বুঝতে পারি যে ফোন অলরেডি অনেক হাত হয়ে গেছে। তখন লোকেশন ছিল নর্থ বাংলা। যাইহোক বুঝলাম যে সেখানে ফোর্স নিয়ে ফোন উদ্ধার করতে গেলে কয়েক হাজার টাকা চলে যাবে। তখন পুলিশের একজন বড় অফিসার আমাকে বলল এতো দৌড়াদৌড়ি করার দরকার নেই। এটা ঢাকা ঢুকলেই ধরে ফেলব। আর তথ্য আমরা পাবোই।
তখন আমি সেই নম্বর আর ছবিগুলো সেভ করে ফোন এর আশা ছেড়ে দিই। হঠাৎ একদিন ডিবি থেকে একজন অফিসার আমাকে জানালেন উনাকে পুলিশের একজন অফিসার আমার ফোন এর তথ্যগুলো দিয়েছিল। তিনি কোনো একভাবে সেই ফোনের আপডেট তথ্য পেয়েছেন, সেইগুলা আমার সঙ্গে শেয়ার করতে চান। তার থেকে সব তথ্য নিলাম। সর্বশেষ এইগুলোও নোট করে রাখলাম। এরপর ৭ মাস পর হঠাৎ একজন কল দিলো। রিসিভ করার পর বলল আপনার কি ফোন হারিয়ে গেছে?
আমি বললাম জি, হারিয়ে গেছে। তারপর বলল আসলে ফোনটা আমার কাছে আছে। আমি এক জায়গা থেকে কিনেছি। আমার এক বড় ভাই এপিবিএনে আছে। এয়ারপোর্টে তার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করার পর উনি বলেন, আপনার ফোন আপনাকে ফিরিয়ে দিতে। এজন্য কল দিলাম। তারপর আমি বললাম আচ্ছা আপনি কুরিয়ার করে দেন। আর আপনি যার থেকে কিনেছেন তার তথ্যগুলো আমাকে দেন, আমি চেষ্টা করবো আপনার টাকাগুলো উদ্ধার করে দিতে।
পরবর্তীতে সে ফোন পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি যার থেকে ফোন কিনেছিলেন, তার ফেসবুক আইডি ছাড়া আর কোনো তথ্য ছিল না। আমি তখন আগের নোট করে রাখা ছবিগুলো আর নম্বরগুলো তাকে দিলাম। সে এইগুলোও দেখে বলতেছে, জি ভাইয়া তার থেকেই কিনেছিলাম সরাসরি।
পরবর্তীতে আর কি! এইবার টাকা তো উদ্ধার করতে হবে, কারণ যে ছেলে ফোনটা ফেরত দিচ্ছে সে একজন ছাত্র। এই টাকা তার কাছে অনেক কিছু। সে না বুঝেই এইরকম একটা ফোন কিনে নিজেই ঝামেলায় পড়লো। পরবর্তীতে এই ছেলে যার থেকে কিনেছিলও তাকে কল দিলাম পুলিশের আরেক অফিসার জনি দেব দাসের মাধ্যমে। ভাই সুন্দর করে ছেলেকে বুঝায়। যদিও সে প্রথমে মিথ্যা কথা বলেছিলও। পরবর্তীতে যখন দেখেছিল যে সকল তথ্য আমাদের হাতে আছে তার বাড়ির ঠিকানাসহ।
তখন সে নিজেই নমনীয় হয়ে যায় এবং বলে সেও একজন থেকে কিনেছেন। তবে সে যার কাছে বিক্রি করেছে তার টাকা সে ফিরত দেবে এবং এই ঝামেলা থেকে সে মুক্ত হতে চায়। সে যখন কিনেছিলও তখনও সেখানে আমার তথ্য দেখে সে ভয় পেয়ে যায় এবং সে যোগাযোগ করার ও চিন্তা করে। কিন্তু তার আশেপাশের যারা ছিলও তারা বলে যে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে হয়তোবা তার বিপদ হবে এজন্য সে ভয়ে যোগাযোগ না করে ফোন বিক্রি করে দেয়।
এরপর সে টাকাগুলো সব ফেরত দেয়। তারা বেশ কয়েকবার ফোন এর আইএমইআই পরিবর্তন করার কারণে আমার ফোনের মডেম ফাইল ক্লিন হয়ে যায়। যার কারণে সিম চলছে না আপাতত। এটা ঠিক করে ফেলা যাবে আইএমইআই রিবিল্ড করে।
আইএমইআই রিবিল্ড করলে আমার ওরিজিনাল ফোনের বক্স থেকে দেখে বসাতে হবে। ভাগ্য ভালো ছিল, তারা কোনোভাবেই এমআই অ্যাকাউন্ট মুছতে পারেনি। এটা মুছে গেলেই আর হয়তোবা ফোন পাওয়া যেতো না। কোন এক কারণে এই একাউন্টটি গ্লিচ হয়ে যেতো তাহলে এই একাউন্ট মুছতে পারেনি।
পরবর্তীতে যে ছাত্রের টাকা ফেরত দিলো তাকে বললাম, সে যার থেকে কিনেছে তার তথ্য দিতে। তাহলে তাকে আটক করার জন্য আমরা অ্যাকশন নেব। কিন্তু সে আর ঝামেলায় জড়াতে চায়নি, তার কাছেও সেই লোক এর কোন তথ্য ছিল না। যাইহোক এই ঘটনা থেকে কিছু জিনিস শিখতে পারি আমরা।
১. ফোন কিংবা ল্যাপটপ যেটিই হারিয়ে যাক, আগে জিডি করে ফেলুন। এটা করতে টাকা লাগে না।
২. ফোন কিংবা ল্যাপটপ পান আর না পান সেটার মাধ্যমে যদি কোন অপরাধ কিংবা সাইবার অপরাধ হয় তখন এই জিডির কারণে আইন আপনার পক্ষে থাকবে।
৩. দ্বিতীয় হাত হওয়া জিনিস ক্রিয়ের থেকে দূরে থাকুন। আর কিনলেও যাচাই-বাছাই করে কিনুন এবং যার থেকে কিনছেন তার সকল তথ্য নিয়ে নিন। বিশেষ করে Phone Number / Facebook Account / তার ছবি / বাড়ির Address এবং সম্ভব হলে NID এর Photo Copy!
৪. কখনো হারানো ফোন পেলে কিংবা ভুল করে কিনলে অথবা এই সম্পর্কে তথ্য জানলে দ্রুত আসল মালিককে অবহিত করুন! হতে পারে সে কোথাও ডিজি কিংবা মামলা করে রেখেছে পরবর্তীতে এর কারণে আপনি ও ফেঁসে যেতে পারেন।
৫. এইসব বিষয়ে নিজে জড়িয়ে নিজের এবং নিজের পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করা থেকে বিরত থাকুন। তাই সবসময় এইসব বিষয় গুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।