সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করায় সমস্যা দেখছেন যারা
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গণহারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাদ দেয়ার পরে এখন টেক জায়ান্টগুলো অফলাইনে ট্রাম্পের পক্ষে সহিংসতা প্রতিরোধ করবে কীভাবে- এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ পার্লার গুগল প্লে-স্টোর থেকে শনিবার বাদ দেয়ার পর থেকে এই গুঞ্জন উঠেছে।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে পার্লার অ্যাপ সরানোর সময়েও পার্লারের ওপর শুক্রবার অ্যাপলের দেয়া নোটিশ ঝুলেছিলো। রোববার অ্যাপস্টোর থেকেও অ্যাপটি সরিয়ে দেয়া হয়। একই দিন পার্লারকে ২৪ ঘণ্টার নোটিশ দেয় অ্যামাজন।
গণহারে ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যান করা একটি সমস্যা।
অ্যাঙ্গেলা মেরকেল
অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয় পার্লার অ্যাপ ব্যবহার করে ক্যাপিটাল হিলে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অ্যাপটি সহিংসতা উদ্দীপক পোস্ট সরিয়ে ফেলেনি। এর মধ্য দিয়ে তারা অ্যাপলের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
২০১৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করার পর থেকে পার্লার অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে আসছিলো। আর এই কারণে অ্যাপটির বিরুদ্ধে টুইটার ও ফেসবুক বারবার অভিযোগ করতে থাকে, অ্যাপটির ডানপন্থী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
অন্যদিকে গুগল ও অ্যাপল জানায়, কোনো ধরণের সহিংসতায় উসকানিমূলক কনটেন্ট তাদের প্ল্যাটফরমে প্রচার করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নীতিশাস্ত্র ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক স্টিফেন হেয়ার বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটি টেক জায়ান্ট কর্তৃক কোনো একটি অ্যাপকে ওয়েবস্টোর থেকে বাদ দেয়ার ঘটনা এটাই একমাত্র নয়। তিনি বলেন, ‘অ্যামাজন পার্লারের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা অভূতপূর্ব নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোম্পানিগুলো এমন কাজ করেছে। যেমন ক্লাউডফ্লেয়ার ডিডসের কনটেন্ট সরিয়ে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কেবল অ্যামাজনই করেনি বরং গুগল ও অ্যাপলও এর সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা ক্যাপিটাল হিলে গত সপ্তাহে ট্রাম্পসমর্থকদের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটার, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টুইচসহ অন্য বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যান করা হয়েছে।’
অ্যামাজন পার্লারের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা অভূতপূর্ব নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোম্পানিগুলো এমন কাজ করেছে। যেমন ক্লাউডফ্লেয়ার ডিডসের কনটেন্ট সরিয়ে দিয়েছে।
স্টিফেন হেয়ার
ইউটিউবও ট্রাম্পের কয়েকটি ভিডিও সরিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি ইউরোপীয় নের্তৃবৃন্দ ভালোভাবে দেখছেন না। বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, ‘গণহারে ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যান করা একটি সমস্যা।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন ক্যাপিটাল হিলে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর গণহারে ট্রাম্পকে ব্যান করাকে বলেছেন, ‘এটা আমাদের ৯/১১-এর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া এখন বাকস্বাধীনতাকে দমন করছে।’
সোশ্যাল মিডিয়া এখন বাকস্বাধীনতাকে দমন করছে।
ম্যাট হ্যানকক
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ও অন্যতম বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি ট্রাম্পের ব্যান হওয়ার সঙ্গে টুইটারের সেন্সরশীপ ব্যবস্থার তুলনা করে টুইটবার্তায় জানান, ‘টুইটারে ট্রাম্পের ব্যান হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার সব স্তরের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়ে আসছে এবং সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়ে থাকে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনে টুইটারের মতো অসংখ্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ রয়েছে যেগুলো এসব দেশের সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রাখে।’
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, পার্লার অ্যাপ সরিয়ে দেয়ার কারণে অ্যামাজনের বিরুদ্ধে সোমবার আদালতে অভিযোগ করেছে অ্যাপটি।
টুইটারে ট্রাম্পের ব্যান হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার সব স্তরের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়ে আসছে এবং সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়ে থাকে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনে টুইটারের মতো অসংখ্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ রয়েছে যেগুলো এসব দেশের সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রাখে।
অ্যালেক্সেই নাভালনি
উল্লেখ্য, মার্চে ফেসবুক এবং টুইটার উভয়েই করোনাভাইরাস বিষয়ক ভুল তথ্য প্রকাশের কারণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারো এবং ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পোস্ট সরিয়েছে। এমনকি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টও সরিয়েছে টুইটার। সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা বলেন, ট্রাম্পকে ব্যান করার মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
এইচএকে/এএ