টুইটার, গুগল ও ফেসবুকের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মামলা
সেন্সরশিপের অভিযোগে টেক জায়ান্ট ফেসবুক, গুগল ও টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ৩ প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহীদের অভিযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার কারণে তিনি সেন্সরশিপের শিকার হয়েছেন।
এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ওই প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
বুধবার (৭ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পসমর্থকদের সহিংসতার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ট্রাম্প স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ রয়েছেন। চেষ্টা করেও তিনি এ প্ল্যাটফর্মগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। পরবর্তীতে নতুন ‘কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম’ ও বিকল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে মামলার মধ্য দিয়ে ‘বাকস্বাধীনতার চরম উৎকর্ষ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ওপর আরোপিত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবি করছি। আমার সম্পর্কে প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিনিয়ত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মগুলো সাবেক একজন প্রেসিডেন্টকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারলে যেকোনো কিছুই তাদের মাধ্যমে সম্ভব। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার হারানো অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়া হোক- এটিই দাবি করছি।’
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পসমর্থকদের সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগে গত ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে টুইটার। এর আগে ৭ জানুয়ারি ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে ওভারসাইট বোর্ডের পর্যালোচনায় ফেসবুকে ট্রাম্পকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে ফেসবুকের ওভারসাইট বোর্ডের পর্যালোচনা যখন চলছিল, ঠিক তখনই টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডর্সি বলেছিলেন, ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার কারণে তিনি গর্বিত নন। একইভাবে ট্রাম্প ১২ জানুয়ারি ইউটিউবে নিষিদ্ধ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইউটিউব বলেছে, সহিংসতার আশঙ্কা কমে গেলে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ফেরত দেওয়া হবে। গুগল ও স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতেও তার ওপর আরোপিত হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তার কেবল একটাই দাবি সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের নিষিদ্ধ হওয়াকে কীভাবে দেখছেন বিশ্বনেতারা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষিদ্ধ হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বনেতাদের বড় একটি অংশের সহানুভূতি লাভ করেছেন। ফেসবুক, টুইটারসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ হওয়াকে ভালোভাবে দেখেননি জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পকে গণহারে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিষিদ্ধ করা একটি সমস্যা।’
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে বাকস্বাধীনর দমন করা হয়েছে।
রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্সাই নাভালনি বলেন, টুইটারে ট্রাম্পের স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার সব স্তরের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়ে আসছে এবং সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়ে থাকে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনে টুইটারের মতো অসংখ্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ রয়েছে যেগুলো এসব দেশের সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রাখে।
ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের পর শেয়ারবাজারে স্মরণকালের মধ্যে বড় দরপতন হয়েছে টুইটারের। ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে প্ল্যাটফর্মটির ৭ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
সূত্র : বিবিসি।
এইচএকে/আরআর/এএ