ফোরজি ফিচার ফোন তৈরির নির্দেশ, লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলো বিটিআরসি
টুজি তথা ফিচার ফোনের উৎপাদন, সংযোজন ও বাজারজাতকরণ কমিয়ে স্মার্ট ফোন বা ফোরজি ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংযোজন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত এপ্রিল মাসে মোবাইল উৎপাদকদের কাছে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ওই একই চিঠিতে ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদনের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, যা চলতি বছর থেকেই কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, মোবাইল উৎপাদকদের ফোরজি ফিচার ফোন সেট উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে বলেছি। মোবাইল উৎপাদকরা পারবে বলেছেন। দামও সহনশীলতার মধ্যে থাকবে। তিনি জানান, ফোরজি ফিচার ফোন সেটের দাম হতে পারে ৩ হাজার টাকা। ফোনগুলো ভোল্টি (ভয়েস ওভার এলটিই প্রযুক্তি) সমর্থিত হবে।
কারা কত মোবাইল সেট তৈরি করবে?
মোবাইল উৎপাদকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজকে ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদনের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার পিস হ্যান্ডসেট, এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজকে ৬০ হাজার, আলামিন অ্যান্ড ব্রাদার্স ১২ হাজার, আনিরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ২৫ হাজার, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড ২৫ হাজার, বাংলাট্রনিক্স টেকিনোলজি লিমিটেড ২০ হাজার, ইউনিয়ন টেকপার্ক লিমিটেড ১০ হাজার, লিনেক্স ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশ লিমিটেড ১০ হাজার, আর এফ এল ইলেক্ট্রনিকস লিমিটেড ৫ হাজার ও স্মার্টু টেকিনোলজি বিডি লিমিটেড ৫০ হাজার ফোরজি ফিচার ফোন তৈরি করবে।
জিএসএমএ’র রিপোর্ট (মোবাইল ইকোনমি রিপোর্ট এশিয়া প্যাসিফিক ২০২৩) বলছে, ২০২২ সালে দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৬ শতাংশ ফোরজি ব্যবহার করতেন। ২০৩০ সালে যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৭৩ শতাংশ। ফাইভজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা হবে মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ২২ শতাংশ।
আরও পড়ুন
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নামকরা ব্র্যান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টুজি ফোনে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ করে সেটাকে ফোরজি ফিচার ফোনে (অ্যান্ড্রয়েড) রূপান্তর করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের ফোনগুলোর দাম পড়বে সাড়ে চার হাজার থেকে চার হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েডের বাইরে ফোরজি ফিচার ফোন তৈরি করতে চাইলে খরচ পড়বে ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে চার হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
অপরদিকে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিজওয়ানুল হক বলেন, বাধ্য হয়ে আমাদের এটা করতে হচ্ছে। তবে মোটেই লাভজনক হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টুজি ফোনের সঙ্গে ফোরজি ফিচার ফোনের দামের পার্থক্য হবে প্রায় এক হাজার টাকা। তিনি মনে করেন, এটা কার্যকরের আগে এনইআইআর চালু করতে হবে। তা নাহলে গ্রে মার্কেট আরও বড় হয়ে যাবে। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে এটা বন্ধের (ফোর-জি ফিচার ফোনের উৎপাদন) বিষয়ে আলাপ চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদনের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মহাসড়কে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল হ্যান্ডসেটের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং তা ভোল্টি প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম। সারা দেশে বিস্তৃত ফোরজি নেটওয়ার্কের সুফল ভোগ করতে প্রয়োজন স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোন। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও টুজি ফিচার ফোন ব্যবহার করছে বিধায় তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশব্যাপী ফোরজি নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোন সেটের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বিটিআরসি আরও বলেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর হ্যান্ডসেট উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান শুধু টুজি ফিচার ফোন উৎপাদন করছে। অর্থাৎ তারা কোনও স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদন করছে না। ফলে টুজি ব্যবহারকারীরা ফোরজি নেটওয়ার্কের ভোল্টি প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত। এ বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোল্টি সক্ষম মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং নেটওয়ার্ক অপটিমাইজেশন শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
ওই কর্মশালায় কমিশন এবং কমিশন সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই কার্যক্রম (ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদন) গ্রহণের সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশে বলা হয়, টুজি ডিভাইসের পরিবর্তে এখনই স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোনের উৎপাদন শুরু করতে হবে এবং এর পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
পিএইচ