‘গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেটের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’
ইন্টারনেট ও ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ওটিটি বা ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের সাবেক সচিব ড. বিকর্ণকুমার ঘোষ বলেন, আমরা পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছি অর্থনৈতিকভাবেও। আর বর্তমানে ইন্টারনেট আমাদের মৌলিক অধিকার। তাই ইন্টারনেটে লাইভ টেলিভিশন দেখতে চাওয়া বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টিভি দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার। এখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা সমীচীন নয়।
তিনি বলেন, ওটিটিতে লাইভ টিভি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আপাত দৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেটে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, অন্যান্য দেশে আগে পলিসি তৈরি হয় তারপর গ্রাহক তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে হয় উল্টা। দেশের ভেতরে পরিচালনাকারী অপারেটরদের প্ল্যাটফর্মে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে কিন্তু নেটফ্লিক্স ,এমাজনের মতো প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হচ্ছে না। ক্যাবল ব্যবসায়ীদের ৭০ ভাগ অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের ইন্টারনেট ব্যবসা করার আইনগত অধিকার নেই অথচ তারা করছে। আমরা তাদের বাঁধা দিচ্ছি না। কিন্তু তারা আমাদের ইন্টারনেট ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই ইন্টারনেট আর ক্যাবল ব্যবসা আলাদা করা না। এই সিস্টেম (পদ্ধতি) একমাত্র বাংলাদেশে। আর এসব কারণেই অতিরিক্ত তারের জঞ্জাল। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টিভি বন্ধ করা উচিত হয়নি।
তিনি বলেন, খুব দ্রুত তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে সমস্যার সমাধান করা না হলে দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে বিদেশে টাকা চলে যাবে। ইন্টারনেটে এক্সেস বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালিদ আবু নাসের বলেন, ২০১৯ সালে বিশ্বে অতিথি ব্যবসা ছিল ১২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৭ সালে বিশ্বব্যাপী এই বাজার দাঁড়াবে প্রায় ১হাজার ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে ২০৩০ সালে নাগাদ ১ হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড়াবে। তাই খুব দ্রুত এ সেক্টরে প্রতিবন্ধকতা দূর করে সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে হবে।
এ সময় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্বে ৪২টি দেশে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালের ৩ জুন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ইন্টারনেটের গুরুত্ব বিষয়ক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই দেশগুলো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন বা আইটিইউ এর সনাতন অনুসারে বর্তমানে ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের ক্ষমতা আসার পর এমনকি তাদের নির্বাচন ইশতেহারে ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ানের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এবার ক্ষমতায় এসে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশকে নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যেখানে সরকার ঘরে ঘরে শতভাগ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে সে সময় তিন কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টিভি দেখতে না দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই আমরা সরকারের কাছে এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি।
আরএইচটি/এসকেডি