মানুষের মোবাইলে আসক্তি দেখে ক্ষোভ খোদ আবিষ্কারকের
মোবাইল ছাড়া যেন একটি মুহূর্তও চলে না। এখন প্রায় সব বয়সী মানুষের অবসর কাটে ফোনের দিকে তাকিয়ে। এ যেন এক কঠিন নেশা! এগুলো দেখে মোবাইলের আবিষ্কারক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার বলেছেন, ‘লোকজন সারা দিন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এমন হবে কখনো ভাবিনি!
তিনি বলেন, মন ভেঙে যায়, যখন দেখি কেউ মোবাইল দেখতে দেখতে রাস্তা পার হচ্ছেন। কিছু মানুষ মারা না গেলে কারো বোধ আসবে না।
>>>আইফোনকে ছাড়িয়ে যেতে চায় নোকিয়া
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার ডেল মারেতে নিজের দপ্তরে এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এ কথা বলেন।
পঞ্চাশ বছর আগে মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন ৯৪ বছর বয়সী মার্টিন কুপার। এখন এই যন্ত্রের প্রতি মানুষের মোহ ও মায়া দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তিনি। কুপার বলেন, পকেটের ভেতরে থাকা ছোট্ট যন্ত্রটা বহু মুশকিল আসান করে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু মানুষ মোবাইলের প্রতি একটু বেশি মাত্রায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে!
>>>অ্যান্ড্রয়েড ১৪ এ চলবে না যে অ্যাপগুলো, পরিকল্পনা গুগলের
কুপারের নিজের হাতেও অ্যাপলের ঘড়ি। ব্যবহার করেন আইফোনের নবতম সংস্করণটি। এ বিষয়ে বেশ শৌখিন কুপার। জানালেন, নতুন সংস্করণ এলেই তিনি মোবাইল ফোন বদলান। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, ফোনে হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে, যার বেশির ভাগের ব্যবহার তিনি জানেন না।
কুপার বলেন, আমার নাতি নাতনিরা বা তাদের ছেলে মেয়েরা যেভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, আমি কোনো দিন পারব না।
>>>অ্যামোলেড ডিসপ্লের স্মার্টফোন সেরা কেন?
জানিয়েছেন, ফোন তিনি বেশিটাই ব্যবহার করেন কথা বলার জন্য। কুপার বলেন, আজ যে মোবাইল ফোনের জাদুতে মজে রয়েছে মানুষ, তাও এক সময় থাকবে না। প্রতিটি প্রজন্ম আরো বুদ্ধি ধরবে, প্রযুক্তি আরো অনেক উন্নত হবে।
সত্যিই তো তাই। ৫০ বছর আগে যে যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, সেটাই কি আর আগের মতো আছে!
>>>স্মার্টফোন ভেঙে গেলে ডাটা উদ্ধার করবেন যেভাবে
কুপার প্রথম মোবাইল ফোনটি তৈরি করেছিলেন ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল। সেই ফোন ছিল বেশ ভারী, অনেক তারে প্যাঁচানো এক জটিল বস্তু। সে সময়ে তিনি একটি মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থায় কাজ করতেন। লাখ লাখ ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ওই সংস্থা। বাজারে প্রতিযোগিতাও দারুণ। রীতিমতো টক্কর চলছে, কে প্রথম মোবাইল ফোন আনবে। কারণ মোবাইল ফোন তৈরির পরিকল্পনা মানুষের মাথায় এসেছিল অনেক দিন আগেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পরপরই প্রথম বিষয়টা নিয়ে ভাবা শুরু হয়েছিল।
১৯৬০-এর দশকে গাড়িতে ফোন রাখার ব্যবস্থা করে একটি সংস্থা। কিন্তু সেই আবিষ্কার খুব বেশি সফল হয়নি। গাড়িতে বিশালাকার ব্যাটারি রাখতে হতো তার জন্য। সার্বিকভাবে বিষয়টা বেশ ঝামেলার। কুপারের মনে হয়েছিল, এতে আসল কার্যসাধন হয়নি। লোকজনের সঙ্গে সবসময় তাদের নিজস্ব ফোন থাকছে না।
>>>অন্ধকারে মোবাইল দেখে যে বিপদে পড়লেন তরুণী
১৯৭২ সালের শেষে কুপার ঠিক করেন, তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরি করবেন, যা কোনো ব্যক্তি সবসময় নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। টানা তিন মাস দিনরাত গবেষণা করেন কুপার ও তার বিশেষজ্ঞ দল। পরের বছর মার্চ মাসের শেষে সমাধান মেলে। কুপারের তৈরি করা প্রথম মোবাইল ফোনটির ওজন ছিল ১ কিলোগ্রামেরও বেশি। সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। সেই ২৫ মিনিট হাতে নিয়েই কুপার প্রথম ফোনটি করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থার অফিসে। বলেছিলেন, আমি মার্টিন কুপার বলছি। আমি একটা হাতেধরা সেল ফোনে কথা বলছি। একটা সত্যিকারে সেল ফোন, ব্যক্তিগত, এক জায়গা থেকে অন্যত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, হাতে ধরা যায়। ওপারে তখন অপার নিস্তব্ধতা!
এমএ